পৃথিবী স্থির ( ঘূর্ণায়মান নয়..)
কুরআন থেকে স্থির পৃথিবীর দলিলসমূহ
সূরা ফাতির (৩৫:৪১)
اِنَّ اللّٰهَ یُمْسِکُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ اَنْ تَزُوْلَا ۬ۚ وَ لَئِنْ زَالَتَاۤ اِنْ اَمْسَکَهُمَا مِنْ اَحَدٍ مِّنْۢ بَعْدِهٖ ؕ اِنَّهٗ کَانَ حَلِیْمًا غَفُوْرًا ﴿۴۱﴾
আল্লাহই আসমান ও যমীনকে স্থির রাখেন যাতে ও দু’টো টলে না যায়। ও দু’টো যদি টলে যায় তাহলে তিনি ছাড়া কে ও দু’টোকে স্থির রাখবে? তিনি পরম সহিষ্ণু, পরম ক্ষমাশীল।
- [তাইসীরুল ক্বুরআন]
সূরা আর-রুম (৩০:২৫)
وَ مِنْ اٰیٰتِهٖۤ اَنْ تَقُوْمَ السَّمَآءُ وَ الْاَرْضُ بِاَمْرِهٖ ؕ ثُمَّ اِذَا دَعَاکُمْ دَعْوَۃً ٭ۖ مِّنَ الْاَرْضِ ٭ۖ اِذَاۤ اَنْتُمْ تَخْرُجُوْنَ ﴿۲۵﴾
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তাঁরই নির্দেশে আসমান ও যমীন স্থিতিশীল থাকে। তারপর তিনি যখন তোমাদেরকে যমীন থেকে বের হয়ে আসার জন্য একবার আহবান করবেন তখনই তোমরা বের হয়ে আসবে।
- [আল বায়ান ফাউন্ডেশন]
সূরা আল মু‘মিন/গাফির (৪০:৬৪)
اَللّٰهُ الَّذِیْ جَعَلَ لَکُمُ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّ السَّمَآءَ بِنَآءً وَّ صَوَّرَکُمْ فَاَحْسَنَ صُوَرَکُمْ وَ رَزَقَکُمْ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ ؕ ذٰلِکُمُ اللّٰهُ رَبُّکُمْ ۚۖ فَتَبٰرَکَ اللّٰهُ رَبُّ الْعٰلَمِیْنَ ﴿۶۴﴾
আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে স্থিতিশীল করেছেন এবং আসমানকে করেছেন ছাদ। আর তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দিয়েছেন, অতঃপর তোমাদের আকৃতিকে সুন্দর করেছেন এবং তিনি পবিত্র বস্তু থেকে তোমাদেরকে রিয্ক দান করেছেন। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। সুতরাং সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কত বরকতময়;
- [আল বায়ান ফাউন্ডেশন]
সূরা আন-নাহল (১৬:১৫)
وَ اَلْقٰی فِی الْاَرْضِ رَوَاسِیَ اَنْ تَمِیْدَ بِکُمْ وَ اَنْهٰرًا وَّ سُبُلًا لَّعَلَّکُمْ تَهْتَدُوْنَ ﴿ۙ۱۵﴾
তিনি যমীনে সুদৃঢ় পর্বত সংস্থাপিত করেছেন যাতে যমীন তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয়, আর সংস্থাপিত করেছেন নদী নির্ঝরিণী আর পথ যাতে তোমরা পথের সন্ধান পেতে পার।
- [তাইসীরুল ক্বুরআন]
সূরা আন-নামাল (২৭:৬১)
اَمَّنْ جَعَلَ الْاَرْضَ قَرَارًا وَّ جَعَلَ خِلٰلَهَاۤ اَنْهٰرًا وَّ جَعَلَ لَهَا رَوَاسِیَ وَ جَعَلَ بَیْنَ الْبَحْرَیْنِ حَاجِزًا ؕ ءَ اِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ؕ بَلْ اَکْثَرُهُمْ لَا یَعْلَمُوْنَ ﴿ؕ۶۱﴾
বলত, কে পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী এবং ওর মাঝে মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদ-নদী এবং তাকে স্থির রাখার জন্য স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বত ও দুই সমুদ্রের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায়; আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা‘বূদ আছে কি? তবুও তাদের অনেকেই জানেনা।
- [মুজিবুর রহমান]
সূরা লুকমান (৩১:১০)
خَلَقَ السَّمٰوٰتِ بِغَیْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا وَ اَلْقٰی فِی الْاَرْضِ رَوَاسِیَ اَنْ تَمِیْدَ بِکُمْ وَ بَثَّ فِیْهَا مِنْ کُلِّ دَآبَّۃٍ ؕ وَ اَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَنْۢبَتْنَا فِیْهَا مِنْ کُلِّ زَوْجٍ کَرِیْمٍ ﴿۱۰﴾
তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ছাড়া যা তোমরা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান পর্বতমালা যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে নড়াচড়া না করে আর তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার জীবজন্তু, আর আমিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তাতে উদ্গত করি যাবতীয় কল্যাণকর উদ্ভিদ।
- [তাইসীরুল ক্বুরআন]
সূরা আল-আম্বিয়া (২১:৩১)
وَ جَعَلْنَا فِی الْاَرْضِ رَوَاسِیَ اَنْ تَمِیْدَ بِهِمْ ۪ وَ جَعَلْنَا فِیْهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ یَهْتَدُوْنَ ﴿۳۱﴾
আর পৃথিবীতে আমি স্থাপন করেছি সুদৃঢ় পর্বত যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে নড়াচড়া না করে। আর তাতে সৃষ্টি করেছি প্রশস্ত পথ যাতে তারা পথ পেতে পারে।
- [তাইসীরুল ক্বুরআন]
সাহাবীর বক্তব্য থেকে স্থির পৃথিবীর দলিলসমূহ
সাহাবী উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) [মৃত: ২৩ হিজরী]
সাহাবী উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কসম করার সময় বলতেন:
لا والذي تقوم السماء والأرض بأمره،
“সেই আল্লাহর কসম, যিনি আসমান ও যমীনকে স্থির রেখেছেন স্বীয় আদেশে।"
[তাফসীরে ইবনে কাসীর ৬/৩১০, ৩০:২৫ নং আয়াতের তাফসীর]
[সহীহ বুখারী ৩০৯৪, ৪০৩৩, ৫৩৫৮, ৬৭২৮, ৭৩০৫]
পূর্ববর্তী আলেমদের বক্তব্য থেকে স্থির পৃথিবীর দলিলসমূহ
ইমাম আব্দুল কাহির আল বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪২৯ হিজরী]
ইমাম আব্দুল কাহির আল বাগদাদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
فِيهَا وَأَجْمعُوا على وقُوف الارض وسكونها وان حركتها انما تكون بِعَارِض يعرض لَهَا من زَلْزَلَة وَنَحْوهَا خلاف قَول من زعم من الدهرية أَن الارض تهوى أبدا وَلَو كَانَت كَذَلِك لوَجَبَ الا يلْحق الْحجر الذى نلقيه من ايدينا الارض أبدا لَان الْخَفِيف لَا يلْحق مَا هُوَ أثقل مِنْهُ فى انحداره وَأَجْمعُوا على أَن الارض متناهية الْأَطْرَاف من الْجِهَات كلهَا وَكَذَلِكَ السَّمَاء متناهية الاقطار من الْجِهَات السِّت خلاف قَول من زعم من الدهرية انه لَا نِهَايَة للارض من اسفل وَلَا عَن الْيَمين واليسار وَلَا من خلف وَلَا من امام وانما نهايتها من الْجِهَة الَّتِي تلاقى الْهَوَاء من فَوْقهَا وَزَعَمُوا ان السَّمَاء ايضا متناهية من تحتهَا وَلَا نِهَايَة لَهَا من خمس جِهَات سوى جِهَة السّفل وَبطلَان قَوْلهم ظَاهر من جِهَة عود الشَّمْس الى مشرقها كل يَوْم وقطعها جرم السَّمَاء وَمَا فَوق الارض فى يَوْم وَلَيْلَة وَلَا يَصح قطع مَا لَا نِهَايَة لَهَا من المساقة فى الامكنة فى زمَان متناه وَأَجْمعُوا على ان السَّمَاوَات سبع سماوات طباق
আর সকলেই একমত হয়েছেন যে, পৃথিবী স্থির ও নিশ্চল। আর তার গতি কেবলমাত্র আকস্মিক কারণে ঘটে থাকে, যেমন ভূমিকম্প ইত্যাদি। এটা সেই দলের মতের বিপরীত, যারা দাবি করে যে পৃথিবী অনবরত নিচের দিকে পতিত হচ্ছে। আর যদি তা-ই হত, তাহলে আমাদের হাত থেকে নিক্ষিপ্ত পাথর কখনই মাটিতে পড়ত না। কারণ হালকা বস্তু তার চেয়ে ভারি বস্তুর পতনের সময় তাকে কখনই স্পর্শ করতে পারে না।
আর সকলেই একমত হয়েছেন যে, পৃথিবীর সকল দিকেই সীমা আছে। আকাশও তার ছয় দিকে সসীম। এটা সেই দলের মতের বিপরীত, যারা দাবি করে যে পৃথিবীর নিচের দিকে, ডানে-বামে, পিছনে বা সামনে কোনো সীমা নেই। তাদের মতে কেবল উপর দিকেই সীমা আছে, যেখানে বাতাসের সীমা। আর তারা আকাশ সম্পর্কেও একই রকম দাবি করে যে, শুধু নিচের দিকে সীমা আছে, কিন্তু অন্য পাঁচ দিকে কোনো সীমা নেই। তাদের এ মতের ভ্রান্তি সুস্পষ্ট। কারণ সূর্য প্রতিদিন তার উদয়স্থলে ফিরে আসে এবং আকাশসীমা ও পৃথিবীর উপরিভাগ অতিক্রম করে একদিন একরাতেই। আর যে বস্তুর সীমা নেই, তা সসীম সময়ে সসীম স্থান অতিক্রম করতে পারে না।
[আল ফারকু বাইনাল ফিরাক লিল বাগদাদী ৩১৮ পৃষ্ঠা]
ইমাম আবু আবদুল্লাহ আল-কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭১ হিজরী]
ইমাম আবু আবদুল্লাহ আল-কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) সূরা রা'দ (১৩:৩) নং আয়াতের তাফসীরে বলেন:
وَالَّذِي عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ وَأَهْلُ الْكِتَابِ الْقَوْلُ بِوُقُوفِ الْأَرْضِ وَسُكُونِهَا وَمَدِّهَا، وَأَنَّ حَرَكَتَهَا إِنَّمَا تَكُونُ فِي الْعَادَةِ بِزَلْزَلَةٍ تُصِيبُهَا.
" মুসলিম ও আহলে-কিতাব আলেমদের বক্তব্য হলো, পৃথিবী স্থির, নিশ্চল এবং প্রসারিত। এটি কেবল ভূমিকম্পের সময় নড়ে ওঠে”
[তাফসীরে কুরতুবী ৯/২৮০]
ইমাম হাফিয ইমাদ উদ্দিন ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৭৪ হিজরী]
ইমাম হাফিয ইমাদ উদ্দিন ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) কুরআনের ৪০:৬৪ নং আয়াতের তাফসীরে বলেন:
وَقَوْلُهُ: {اللَّهُ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأرْضَ قَرَارًا} أَيْ: جَعَلَهَا مُسْتَقَرًّا لَكُمْ، بِسَاطًا مِهَادًا تَعِيشُونَ عَلَيْهَا، وَتَتَصَرَّفُونَ فِيهَا، وَتَمْشُونَ فِي مَنَاكِبِهَا، وَأَرْسَاهَا بِالْجِبَالِ لِئَلَّا تَمِيدَ بِكُمْ،
"আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আল্লাহই তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন স্থিতিশীল।’’ অর্থাৎ তিনি এ পৃথিবীকে তোমাদের জন্যে স্থিতিশীল করেছেন, বিছানা স্বরূপ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা এর উপর বসবাস করতে পার এবং এতে জীবিকা অন্বেষণ করতে পার, আর এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ করতে পার। আর তিনি এ পৃথিবীকে পর্বতমালা দ্বারা সুদৃঢ় করে দিয়েছেন যাতে এটা তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয়।"
[تفسير ابن كثير ت سلامة (7/ 156)
সমসাময়িক আলেমদের বক্তব্য থেকে স্থির পৃথিবীর দলিলসমূহ
শাইখ হামুদ বিন আবদুল্লাহ আল-তুওয়াইযিরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু: ১৪১৩ হিজরী]
শাইখ হামুদ বিন আবদুল্লাহ আল-তুওয়াইযিরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
وقد صرح بعض المحققين بتكفير من يقول بحركة الأرض وسيرها.
"কিছু মুহাক্কিক্বীন স্পষ্টভাবে তাকফীর করেছেন (কাফির বলেছেন) তাদেরকে যে কেউ বলে যে পৃথিবী নড়াচড়া করে এবং চলাচল করে।"
[كتاب: «الصواعق الشديدة على اتباع الهيئة الجديدة» - ص 61]
তথ্যসূত্র: archive.org
শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু: ১৪২০ হিজরী]
শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
أوضحت فيما تقدم أن القول بدوران الأرض ليومي ، والسنوي كله باطل ، وذكرت من الأدلة النقلية والحسية وكلام أهل العلم من المفسرين ، وغيرهم من علماء الإسلام ، وعلماء الملك ما يدل على سكون الأرض واستقرارها ، وعدم دورانها وأن الشمس هي التي تجري حولها كما نظمها الله عز وجل لمصالح العباد ، ومنافعهم
"পূর্ববর্তী আলোচনায় আমি স্পষ্ট করেছি যে, পৃথিবীর দৈনিক ও বার্ষিক গতি সম্পর্কিত সকল দাবি সম্পূর্ণ বাতিল। আমি কুরআন-সুন্নাহের দলিল, মুফাস্সিরীন, ইসলামী আলেমগণ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বক্তব্য উল্লেখ করেছি, যা প্রমাণ করে যে পৃথিবী স্থির ও অবিচল, এর কোনো গতি নেই, বরং সূর্যই তা প্রদক্ষিণ করে - যেমন: আল্লাহ তাআলা তা বান্দাদের কল্যাণ ও উপকারের জন্য ব্যবস্থাপনা করেছেন।"
[(الأدلة العقلية والنقلية) - ص 73]
শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)[মৃত্যু ১৪২১ হিজরী]
অধ্যায়ঃ ঈমান ,
লেখকঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
উত্তর: মান্যবর শাইখ উত্তরে বলেন যে, শরী‘আতের প্রকাশ্য দলীলগুলো প্রমাণ করে যে, সূর্যই পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘুরে। এ ঘুরার কারণেই পৃথিবীতে দিবা-রাত্রির আগমণ ঘটে। আমাদের হাতে এ দলীলগুলোর চেয়ে বেশি শক্তিশালী এমন কোনো দলীল নেই, যার মাধ্যমে আমরা সূর্য ঘূরার দলীলগুলোকে ব্যাখ্যা করতে পারি। সূর্য ঘুরার দলীলগুলো হলো আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَإِنَّ ٱللَّهَ يَأۡتِي بِٱلشَّمۡسِ مِنَ ٱلۡمَشۡرِقِ فَأۡتِ بِهَا مِنَ ٱلۡمَغۡرِبِ﴾ [البقرة: ٢٥٨]
“আল্লাহ তা‘আলা সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন। তুমি পারলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৮] সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠার মাধ্যমে প্রকাশ্য দলীল পাওয়া যায় যে, সূর্য পৃথিবীর উপর পরিভ্রমণ করে।
২) আল্লাহ বলেন,
﴿فَلَمَّا رَءَا ٱلشَّمۡسَ بَازِغَةٗ قَالَ هَٰذَا رَبِّي هَٰذَآ أَكۡبَرُۖ فَلَمَّآ أَفَلَتۡ قَالَ يَٰقَوۡمِ إِنِّي بَرِيٓءٞ مِّمَّا تُشۡرِكُونَ ٧٨﴾ [الانعام: ٧٨]
“অতঃপর যখন সূর্যকে চকচকে অবস্থায় উঠতে দেখলেন তখন বললেন, এটি আমার রব, এটি বৃহত্তর। অতপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যেসব বিষয়ে শরীক কর আমি ওসব থেকে মুক্ত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৭৮]
এখানে নির্ধারণ হয়ে গেল যে, সূর্য অদৃশ্য হয়ে যায়। একথা বলা হয় নি যে, সূর্য থেকে পৃথিবী ডুবে গেল। পৃথিবী যদি ঘূরত তাহলে অবশ্যই তা বলা হত।
৩) আল্লাহ বলেন,
﴿وَتَرَى ٱلشَّمۡسَ إِذَا طَلَعَت تَّزَٰوَرُ عَن كَهۡفِهِمۡ ذَاتَ ٱلۡيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقۡرِضُهُمۡ ذَاتَ ٱلشِّمَالِ﴾ [الكهف: ١٧]
“তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বাম দিকে চলে যায়।” [সূরা কাহাফ, আয়াত: ১৭] পাশ কেটে ডান দিকে বা বাম দিকে চলে যাওয়া প্রমাণ করে যে, নড়াচড়া সূর্য থেকেই হয়ে থাকে। পৃথিবী যদিনড়াচড়া করত তাহলে অবশ্যই বলতেন সূর্য থেকে গুহা পাশ কেটে যায়। উদয় হওয়া এবং অস্ত যাওয়াকে সূর্যের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এটা থেকে বুঝা যায় যে, সূর্যই ঘুরে। পৃথিবী নয়।
৪) আল্লাহ বলেন,
﴿وَهُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلّٞ فِي فَلَكٖ يَسۡبَحُونَ ٣٣﴾ [الانبياء: ٣٣]
“এবং তিনিই দিবা-নিশি এবং চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন। সবাই আপন আপন কক্ষ পথে বিচরণ করে।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৩৩]
ইবন আব্বাস বলেন, লাটিম যেমন তার কেন্দ্র বিন্দুর চার দিকে ঘুরতে থাকে, সূর্যও তেমনিভাবে ঘুরে।
৫) আল্লাহ বলেন,
﴿يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا﴾ [الاعراف: ٥٤]
“তিনি রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিনের মাধ্যমে, দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পিছনে আসে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]
আয়াতে রাতকে দিনের অনুসন্ধানকারী বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী পিছনে পিছনে দ্রুত অনুসন্ধান করে থাকে। এটা জানা কথা যে, দিবা-রাত্রি সূর্যের অনুসারী।
৬) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ بِٱلۡحَقِّۖ يُكَوِّرُ ٱلَّيۡلَ عَلَى ٱلنَّهَارِ وَيُكَوِّرُ ٱلنَّهَارَ عَلَى ٱلَّيۡلِۖ وَسَخَّرَ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلّٞ يَجۡرِي لِأَجَلٖ مُّسَمًّىۗ أَلَا هُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡغَفَّٰرُ ٥﴾ [الزمر: ٥]
“তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫]
আয়াতের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, পৃথিবীর উপরে দিবা-রাত্রি চলমান রয়েছে। পৃথিবী যদি ঘুরতো তাহলে তিনি বলতেন, দিবা-রাত্রির উপর পৃথিবীকে ঘূরান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “সূর্য এবং চন্দ্রের প্রত্যেকেই চলমান”। এ সমস্ত দলীলের মাধ্যমে জানা গেল যে, সুস্পষ্টভাবেই সূর্য ও চন্দ্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করছে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, চলমান বস্তুকে বশীভুত করা এবং কাজে লাগানো একস্থানে অবস্থানকারী বস্তুকে কাজে লাগানোর চেয়ে অধিক যুক্তিসঙ্গত।
৭) আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلشَّمۡسِ وَضُحَىٰهَا ١ وَٱلۡقَمَرِ إِذَا تَلَىٰهَا ٢﴾ [الشمس: ١، ٢]
“শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে।” [সূরা আশ-শামস, আয়াত: ১-২]
এখানে বলা হয়েছে যে, চন্দ্র সূর্যের পরে আসে। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সূর্য এবং চন্দ্র চলাচল করে এবং পৃথিবীর উপর ঘুরে। পৃথিবী যদি চন্দ্র বা সূর্যের চার দিকে ঘুরত, তাহলে চন্দ্র সূর্যকে অনুসরণ করতনা। বরং চন্দ্র একবার সূর্যকে, আর একবার সূর্য চন্দ্রকে অনুসরণ করত। কেননা সূর্য চন্দ্রের অনেক উপরে। এ আয়াত দিয়ে পৃথিবী স্থীর থাকার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করার ভিতরে চিন্তা-ভাবনার বিষয় রয়েছে।
৮) মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلشَّمۡسُ تَجۡرِي لِمُسۡتَقَرّٖ لَّهَاۚ ذَٰلِكَ تَقۡدِيرُ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡعَلِيمِ ٣٨ وَٱلۡقَمَرَ قَدَّرۡنَٰهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَٱلۡعُرۡجُونِ ٱلۡقَدِيمِ ٣٩ لَا ٱلشَّمۡسُ يَنۢبَغِي لَهَآ أَن تُدۡرِكَ ٱلۡقَمَرَ وَلَا ٱلَّيۡلُ سَابِقُ ٱلنَّهَارِۚ وَكُلّٞ فِي فَلَكٖ يَسۡبَحُونَ ٤٠﴾ [يس: ٣٨، ٤٠]
“সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নির্ধারণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মঞ্জিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। সূর্যের পক্ষে চন্দ্রকে নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। রাতের পক্ষেও দিনের অগ্রবতী হওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।” [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৩৮-৪০]
সূর্যের চলা এবং এ চলাকে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর নির্ধারণ বলে ব্যাখ্যা করা এটাই প্রমাণ করে যে, সূর্য প্রকৃতভাবেই চলমান। আর এ চলাচলের কারণেই দিবা-রাত্রি এবং ঋতুর পরিবর্তন হয়। চন্দ্রের জন্য মঞ্জিল নির্ধারণ করার অর্থ এ যে, সে তার মঞ্জিলসমূহে স্থানান্তরিত হয়। যদি পৃথিবী ঘুরত, তাহলে পৃথিবীর জন্য মঞ্জিল নির্ধারণ করা হত। চন্দ্রের জন্য নয়। সূর্য কর্তৃক চন্দ্রকে ধরতে না পারা এবং দিনের অগ্রে রাত থাকা সূর্য, চন্দ্র, দিন এবং রাতের চলাচলের প্রমাণ বহন করে।
৯) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবু যরকে বলেছেন,
«أَتَدْرِي أَيْنَ تَذْهَبُ قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّهَا تَذْهَبُ حَتَّى تَسْجُدَ تَحْتَ الْعَرْشِ فَتَسْتَأْذِنَ فَيُؤْذَنُ لَهَا وَيُوشِكُ أَنْ تَسْجُدَ فَلَا يُقْبَلَ مِنْهَا وَتَسْتَأْذِنَ فَلَا يُؤْذَنَ لَهَا يُقَالُ لَهَا ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَطْلُعُ مِنْ مَغْرِبِهَا»
“হে আবু যর! তুমি কি জান সূর্য যখন অস্ত যায় তখন কোথায় যায়? আবু যার বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় ‘আরশের নিচে গিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং পুনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায়। অতঃপর তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। সে দিন বেশি দূরে নয়, যে দিন অনুমতি চাবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া হবে না। তাকে বলা হবে যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফেরত যাও। অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকেই উদিত হবে।”[সহীহ বুখারী, অধ্যায়: বাদউল খালক; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান]
এটি হবে কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে। আল্লাহ সূর্যকে বলবেন, যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফেরত যাও, অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, সূর্য পৃথিবীর উপরে ঘুরছে এবং তার এ ঘুরার মাধ্যমেই উদয়-অস্ত সংঘটিত হচ্ছে।
১০) অসংখ্য হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে, উদয় হওয়া, অস্ত যাওয়া এবং ঢলে যাওয়া এ কাজগুলো সূর্যের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলো সূর্য থেকে প্রকাশিত হওয়া খুবই সুস্পষ্ট। পৃথিবী হতে নয়। হয়তো এ ব্যাপারে আরো দলীল-প্রমাণ রয়েছে। সেগুলো আমার এ মুহূর্তে মনে আসছেনা। তবে আমি যা উল্লেখ করলাম, এ বিষয়টির দ্বার উম্মুক্ত করবে এবং আমি যা উদ্দেশ্য করেছি, তা পূরণে যথেষ্ট হবে। আল্লাহর তাওফীক চাচ্ছি!
শায়খ সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম ১৩৫৪ হিজরী]
احسن الله اليكم في الايه الكريمه يقول استفسر عن هذه الايه والشمس تجري لمستقر لها ذلك تقدير العزيز العليم هل الشمس تدور حول الارض -
الى شك هذا هو ما دل عليه القران
والشمس تجري هم يقولون لها الشمس واقفه والارض هي اللي تجري هذا عكس ما جاء في القران وابراهيم عليه السلام قال للنمرود ان الله ياتي بالشمس من المشرق تاتي بها من المغرب
فبهت الذي كفر فكوننا نترك ما دل عليه القران وناخذ بالنظريات الحديثه هذا لا يكون من المسلم واجب على المسلم ان يتبع القران الله جل وعلا يقول ما اشهدتهم خلق السماوات والارض ولا خلق انفسهم وما كنت متخذ المضلين عضدا -
نعم
শায়খ সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) এর নিকটে,
প্রশ্নকারী বলেন: আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।
এই মহিমান্বিত আয়াতে আল্লাহ বলেন:
"وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ"
(সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩৮)
আমি জানতে চাই এই আয়াত সম্পর্কে —"সূর্য চলতে থাকে তার নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে।"
এই আয়াত কি বুঝায় যে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে?
শায়খ সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তর দেন:
এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে —এটাই কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশনা।
আর তারা (জোতির্দবিদরা) বলে: সূর্য স্থির এবং পৃথিবী ঘোরে। অথচ এটা কুরআনের বিপরীত কথা।
ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) নমরূদের কাছে বলেছিলেন:
"নিশ্চয়ই আল্লাহ সূর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে, তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে উদিত করে দেখাও।"
📖 (সূরা আল-বাকারা ২:২৫৮)
ফলে কুফরি করেছিল যে ব্যক্তি, সে হতভম্ব হয়ে গেল।
সুতরাং, আমরা যদি কুরআনের যেটা স্পষ্ট দলীল, তা ছেড়ে দিয়ে আধুনিক তত্ত্বগুলোকে গ্রহণ করি —এটা কোনো মুসলমানের কাজ নয়।
একজন মুসলমানের দায়িত্ব হলো কুরআনের অনুসরণ করা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
"مَا أَشْهَدتُهُمْ خَلْقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَا خَلْقَ أَنفُسِهِمْ ۖ وَمَا كُنتُ مُتَّخِذَ الْمُضِلِّينَ عَضُدًا"
📖 (সূরা আল-কাহফ ১৮:৫১)
“আমি তাদের উপস্থিত রাখিনি আসমান ও যমীনের সৃষ্টির সময়, আর না তাদের নিজেদের সৃষ্টির সময়, আর আমি বিভ্রান্তকারী লোকদেরকে কোনো সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করি না।”
হ্যা
তথ্যসূত্র: - https://youtu.be/32PPmN-Tq9g?si=4188uWdpnE2NHPGp