সমতল পৃথিবী তত্ত্ব কী?
পৃথিবী সমতল এবং স্থির
আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীকে সমতল করেছেন (কুরআন ৮৮:২০); পৃথিবী গোলক আকৃতির নয়।
আল্লাহ তায়ালা স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান ও সাত পৃথিবী (কুরআন ৬৫:১২)।
আসমানসমূহ ও পৃথিবীসমূহকে স্থির রাখেন আল্লাহ তায়ালা (কুরআন ৩৫:৪১); পৃথিবী স্থির ঘূর্ণায়মান নয়।
আসমানসমূহ ও পৃথিবীসমূহ স্থির রয়েছে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে (কুরআন ৩০:২৫)।
রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ পথে সাঁতার কাটে। (কুরআন ২১:৩৩)।
[১] ক্বুরআন থেকে সমতল পৃথিবীর দলীলসমূহ
[১] সূরা গাশিয়াহ (৮৮:২০)
আরবী আয়াত
وَ اِلَی الْاَرْضِ کَیْفَ سُطِحَتْ ﴿ٝ۲۰﴾
উচ্চারণ: ওয়া ইলাল আরদি কাইফা ছুতিহাত।
আহসানুল বায়ান: ২০। এবং ভূতলের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে?[1]
মুহিউদ্দিন খান: এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
মুজিবুর রহমান: এবং ভূতলের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে?
আল বায়ান: আর যমীনের দিকে, কীভাবে তা বিস্তৃত করা হয়েছে?
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২০. এবং ভূতলের দিকে, কিভাবে তা বিস্তৃত করা হয়েছে?(১)
তাইসীরুল ক্বুরআন: আর যমীনের দিকে, কীভাবে তাকে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে?
ফযলুর রহমান: এবং পৃথিবীর দিকে যে, কীভাবে তাকে বিস্তৃত করা হয়েছে?
জহুরুল হক: আর এই পৃথিবীর দিকে -- কেমন করে তাকে প্রসারিত করা হয়েছে?
Sahih International: And at the earth - how it is spread out?
[২] সূরা রা'দ (১৩:৩)
হরকত সহ:
وَ هُوَ الَّذِیْ مَدَّ الْاَرْضَ وَ جَعَلَ فِیْهَا رَوَاسِیَ وَ اَنْهٰرًا ؕ وَ مِنْ کُلِّ الثَّمَرٰتِ جَعَلَ فِیْهَا زَوْجَیْنِ اثْنَیْنِ یُغْشِی الَّیْلَ النَّهَارَ ؕ اِنَّ فِیْ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوْمٍ یَّتَفَکَّرُوْنَ ﴿۳﴾
উচ্চারণ: ওয়া হুওয়াল্লাযী মাদ্দাল আরদা ওয়া জা‘আলা ফীহা-রাওয়া-ছিয়া ওয়াআনহা-রাওঁ ওয়া মিন কুল্লিছছামারা-তি জা‘আলা ফীহা- যাওজাইনিছনাইনি ইউগশিল লাইলান্নাহা-র ইন্না ফী যা-লিকা লা আ-য়া-তিল লিকাওমিইঁ ইয়াতাফাক্কারূন।
আল বায়ান: আর তিনিই যমীনকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে সুদৃঢ় পর্বতমালা ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন। আর প্রত্যেক প্রকারের ফল তিনি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। নিশ্চয় যে কওম চিন্তাভাবনা করে তাদের জন্য এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৩. আর তিনিই যমীনকে বিস্তৃত করেছেন(১) এবং তাতে সুদৃঢ়পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন এবং সব রকমের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়(২)। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন(৩) নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।(৪)
তাইসীরুল ক্বুরআন: তিনিই যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন আর তাতে পর্বত ও নদীনালা সংস্থাপিত করেছেন, আর তাতে সকল প্রকারের ফল জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। তিনি দিবসের উপর রাতের আবরণ টেনে দেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শনাবলী রয়েছে।
আহসানুল বায়ান: (৩) তিনিই ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং ওতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন[1] এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।[2] তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।
মুজিবুর রহমান: তিনিই ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং ওতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়; তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।
ফযলুর রহমান: তিনিই সেই সত্তা যিনি ভূমিকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে অনড় পাহাড়-পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন। সেখানে তিনি প্রত্যেক ফলের দুটি করে জোড়া তৈরী করেছেন। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। এর মধ্যে চিন্তাশীল লোকদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।
মুহিউদ্দিন খান: তিনিই ভুমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড় পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দু’দু প্রকার সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্যে নিদর্শণ রয়েছে, যারা চিন্তা করে।
জহুরুল হক: আর তিনিই সেইজন যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন, আর তাতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা ও নদনদী। আর প্রত্যেক ফলের ক্ষেত্রে -- তার মধ্যে তিনি সৃষ্টি করেছেন জোড়ায়-জোড়ায় দুটি-দুটি। তিনি রাত্রিকে দিয়ে দিনকে আবৃত করেন। নিঃসন্দেহ এতে সাক্ষাৎ নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে।
Sahih International: And it is He who spread the earth and placed therein firmly set mountains and rivers; and from all of the fruits He made therein two mates; He causes the night to cover the day. Indeed in that are signs for a people who give thought.
[৩] সূরা নাযিয়াত (৭৯:৩০)
আরবী আয়াত
وَ الْاَرْضَ بَعْدَ ذٰلِکَ دَحٰىهَا ﴿ؕ۳۰﴾
উচ্চারণ: ওয়াল আর দা বা‘দা যা-লিকা দাহা-হা-।
আল বায়ান: এরপর তিনি যমীনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৩০. আর যমীনকে এর পর বিস্তৃত করেছেন।(১)
তাইসীরুল ক্বুরআন: অতঃপর তিনি যমীনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।
আহসানুল বায়ান: ৩০। এবং তারপর তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন।[1]
মুজিবুর রহমান: এবং পৃথিবীকে এরপর বিস্তৃত করেছেন।
ফযলুর রহমান: এর পরে তিনি জমিনকে বিছিয়ে দিয়েছেন।
মুহিউদ্দিন খান: পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।
জহুরুল হক: আর পৃথিবী -- এর পরে তাকে প্রসারিত করেছেন।
Sahih International: And after that He spread the earth.
[৪] সূরা নাবা (৭৮:৬)
আরবী আয়াত
اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَرْضَ مِهٰدًا ۙ﴿۶﴾
উচ্চারণ: আলাম নাজ‘আলিল আরদা মিহা-দা-।
আল বায়ান: আমি কি বানাইনি যমীনকে শয্যা?
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৬. আমরা কি করিনি যমীনকে শয্যা
তাইসীরুল ক্বুরআন: (আমি যে সব কিছুকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম তা তোমরা অস্বীকার করছ কীভাবে) আমি কি যমীনকে (তোমাদের জন্য) শয্যা বানাইনি?
আহসানুল বায়ান: ৬। আমি কি পৃথিবীকে শয্যা (স্বরূপ) সৃষ্টি করিনি? [1]
মুজিবুর রহমান: আমি কি পৃথিবীকে শয্যা (রূপে) নির্মাণ করিনি?
ফযলুর রহমান: আমি কি জমিনকে বিছানা বানাইনি?
মুহিউদ্দিন খান: আমি কি করিনি ভূমিকে বিছানা
জহুরুল হক: আমরা কি পৃথিবীটাকে পাতানো-বিছানারূপে বানাই নি,
Sahih International: Have We not made the earth a resting place?
[৫] সূরা ত্ব-হা (২০:৫৩)
আরবী আয়াত
الَّذِیْ جَعَلَ لَکُمُ الْاَرْضَ مَهْدًا وَّ سَلَکَ لَکُمْ فِیْهَا سُبُلًا وَّ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ؕ فَاَخْرَجْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْ نَّبَاتٍ شَتّٰی ﴿۵۳﴾
উচ্চারণ: আল্লাযী জা‘আলা লাকুমুল আরদা মাহদাওঁ ওয়া ছালাকা লাকুম ফীহা ছুবুলাওঁ ওয়া আনযালা মিনাছছামাই মাআন ফাআখরাজনা-বিহীআযওয়া-জাম মিন নাবা-তিন শাত্তা-।
আল বায়ান: ‘যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে বিছানা বানিয়েছেন এবং তাতে তোমাদের জন্য চলার পথ করে দিয়েছেন। আর আসমান থেকে তিনি পানি বর্ষণ করেন’; অতঃপর তা দিয়ে আমি বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৫৩. যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের জন্য চলার পথ, আর তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দিয়ে আমরা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।(১)
তাইসীরুল ক্বুরআন: যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা, আর তাতে তোমাদের জন্য ক’রে দিয়েছেন চলার পথ। আর আকাশ থেকে তিনি পানি বর্ষণ করেন আর তা দিয়ে আমি বিভিন্ন লতা-যুগল উদগত করি যার প্রত্যেকটি অন্যটি থেকে আলাদা।
আহসানুল বায়ান: (৫৩) যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের চলবার পথ। তিনি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং আমি তা দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।
মুজিবুর রহমান: যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের চলার পথ, তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষন করেন। আমি উহা দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।
ফযলুর রহমান: “যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে একটি বিছানা (বিছানার মত) বানিয়েছেন, তাতে তোমাদের জন্য পথ তৈরী করে দিয়েছেন এবং আসমান থেকে পানি (বৃষ্টি) বর্ষণ করেছেন।” এর দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার গাছপালা উৎপন্ন করেছি।
মুহিউদ্দিন খান: তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।
জহুরুল হক: "যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীটাকে করেছেন একটি বিছানা, আর তোমাদের জন্য এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন পথসমূহ, আর তিনি আকাশ থেকে পাঠান পানি।" তারপর এর দ্বারা আমরা উৎপাদন করি জোড়ায় জোড়ায় বিভিন্ন ধরনের গাছপালা।
Sahih International: [It is He] who has made for you the earth as a bed [spread out] and inserted therein for you roadways and sent down from the sky, rain and produced thereby categories of various plants.
[৬] সূরা আয-যুখরুফ (৪৩:১০)
আরবী আয়াত
الَّذِیْ جَعَلَ لَکُمُ الْاَرْضَ مَهْدًا وَّ جَعَلَ لَکُمْ فِیْهَا سُبُلًا لَّعَلَّکُمْ تَهْتَدُوْنَ ﴿ۚ۱۰﴾
উচ্চারণ: আল্লাযী জা‘আলা লাকুমুল আরদা মাহদাওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুম ফীহা-ছুবুলাল লা‘আল্লাকুম তাহতাদূন।
আল বায়ান: যিনি যমীনকে তোমাদের জন্য শয্যা বানিয়েছেন এবং তাতে তোমাদের জন্য বানিয়েছেন চলার পথ, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১০. যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে বানিয়েছেন শয্যা(১) এবং তাতে বানিয়েছেন তোমাদের চলার পথ(২), যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার;
তাইসীরুল ক্বুরআন: যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিস্তৃত, আর তাতে তোমাদের জন্য বানিয়েছেন চলার পথ- যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার।
আহসানুল বায়ান: (১০) যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন শয্যাস্বরূপ[1] এবং ওতে করেছেন তোমাদের চলার পথ, যাতে তোমরা সঠিক পথ লাভ করতে পার। [2]
মুজিবুর রহমান: যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন শয্যা এবং ওতে করেছেন তোমাদের চলার পথ, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার;
ফযলুর রহমান: যিনি জমিনকে তোমাদের জন্য একটি বিছানা করে দিয়েছেন (যেখানে তোমরা বিশ্রাম করতে পার) এবং সেখানে তোমাদের জন্য রাস্তাঘাট করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা পথ চলতে পার।
মুহিউদ্দিন খান: যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে তোমাদের জন্যে করেছেন পথ, যাতে তোমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার।
জহুরুল হক: যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন এক খাটিয়া, আর এতে তৈরী করেছেন তোমাদের কারণে পথসমূহ, যাতে তোমরা পথের দিশা পেতে পার,
Sahih International: [The one] who has made for you the earth a bed and made for you upon it roads that you might be guided
[৭] সূরা নূহ (৭১:১৯)
আরবী আয়াত
وَ اللّٰهُ جَعَلَ لَکُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًا ﴿ۙ۱۹﴾
উচ্চারণ: ওয়াল্লা-হু জা‘আলা লাকুমুল আরদা বিছা-তা- ।
আল বায়ান: ‘আর আল্লাহ পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিস্তৃত করেছেন,
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৯. আর আল্লাহ তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিস্তৃত—
তাইসীরুল ক্বুরআন: আল্লাহ তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন সম্প্রসারিত,
আহসানুল বায়ান: (১৯) আর আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে বিস্তৃত করেছেন --[1]
মুজিবুর রহমান: এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত –
ফযলুর রহমান: আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা (বিছানার মত সমান ও প্রশস্ত) বানিয়েছেন;
মুহিউদ্দিন খান: আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্যে ভূমিকে করেছেন বিছানা।
জহুরুল হক: "আর আল্লাহ্ তোমাদের জন্য পৃথিবীটাকে করেছেন সুবিস্তৃত,
Sahih International: And Allah has made for you the earth an expanse
[৮] সূরা আয-যারিয়াত (৫১:৪৮)
আরবী আয়াত
وَ الْاَرْضَ فَرَشْنٰهَا فَنِعْمَ الْمٰهِدُوْنَ ﴿۴۸﴾
উচ্চারণ: ওয়াল আর দা ফারাশ-হা-ফানি‘মাল মা-হিদূন।
আল বায়ান: আর আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কতইনা সুন্দর বিছানা প্রস্তুতকারী!
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৪৮. আর যমীন, আমরা তাকে বিছিয়ে দিয়েছি, অতঃপর কত সুন্দর ব্যবস্থাপনাকারী(১) (আমরা)!
তাইসীরুল ক্বুরআন: আর যমীন- তাকে আমিই বিছিয়েছি, আমি কতই না সুন্দর (সমতল) প্রসারণকারী!
আহসানুল বায়ান: (৪৮) এবং আমি ভূমিকে বিছিয়ে দিয়েছি, [1] আমি কত সুন্দর বিস্তারকারী!
মুজিবুর রহমান: এবং আমি ভূমিকে বিছিয়ে দিয়েছি; আমি কত সুন্দরভাবে বিছিয়েছি এটা।
ফযলুর রহমান: আর জমিনকে আমিই বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কত সুন্দর বিছাতে পারি!
মুহিউদ্দিন খান: আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।
জহুরুল হক: আর পৃথিবী -- আমরা একে বিছিয়ে দিয়েছি, কাজেই কত সুন্দর এই বিস্তারকারী!
Sahih International: And the earth We have spread out, and excellent is the preparer.
[৯] সূরা আল-বাকারা (২:২২)
আরবী আয়াত
الَّذِیْ جَعَلَ لَکُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّ السَّمَآءَ بِنَآءً ۪ وَّ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرٰتِ رِزْقًا لَّکُمْ ۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ﴿۲۲﴾
উচ্চারণ: আল্লাযী জা‘আলা লাকুমুল আরদা ফিরা-শাওঁ ওয়াছছামাআ বিনাআওঁ ওয়া আনযালা মিনাছছামাই মাআন ফাআখরাজা বিহী মিনাছছামারা-তি রিযকাল্লাকুম ফালা-তাজ‘আলূলিল্লা-হি আনদা-দাওঁ ওয়া আনতুম তা‘লামূন।
আল বায়ান: যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা, আসমানকে ছাদ এবং আসমান থেকে নাযিল করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর তাঁর মাধ্যমে উৎপন্ন করেছেন ফল-ফলাদি, তোমাদের জন্য রিয্কস্বরূপ। সুতরাং তোমরা জেনে-বুঝে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করো না।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ২২. যিনি যমীনকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আসমানকে করেছেন ছাদ এবং আকাশ হতে পানি অবতীর্ণ করে তা দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেছেন। কাজেই তোমরা জেনেশুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ(১) দাঁড় করিও না।
তাইসীরুল ক্বুরআন: যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ ক’রে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন, কাজেই জেনে বুঝে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করো না।
আহসানুল বায়ান: ২২। যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ সরূপ সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ ক’রে তার দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেছেন। সুতরাং জেনে শুনে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করো না।
মুজিবুর রহমান: যিনি তোমাদের জন্য ভূতলকে শয্যা ও আকাশকে ছাদ স্বরূপ সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্বারা তোমাদের জন্য উপজীবিকা স্বরূপ ফলপুঞ্জ উৎপাদন করেন, অতএব তোমরা আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করনা এবং তোমরা এটা অবগত আছ।
ফযলুর রহমান: যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা এবং আকাশকে শামিয়ানা বানিয়ে দিয়েছেন; আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তার সাহায্যে তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপন্ন করেছেন। তোমরা তাই সবকিছু জেনে আল্লাহর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করো না।
মুহিউদ্দিন খান: যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান।
জহুরুল হক: যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে ফরাশ বানিয়েছেন, আর আকাশকে চাঁদোয়া, আর তিনি আকাশ থেকে পাঠান বৃষ্টি, তা’ দিয়ে তারপর ফলফসল উৎপাদন করেন তোমাদের জন্য রিযেক হিসেবে। অতএব আল্লাহ্র সাথে প্রতিদ্বন্ধী খাড়া করো না, অধিকন্তু তোমরা জানো।
Sahih International: [He] who made for you the earth a bed [spread out] and the sky a ceiling and sent down from the sky, rain and brought forth thereby fruits as provision for you. So do not attribute to Allah equals while you know [that there is nothing similar to Him].
[১০] সূরা আল-হিজর (১৫:১৯)
আরবী আয়াত
وَ الْاَرْضَ مَدَدْنٰهَا وَ اَلْقَیْنَا فِیْهَا رَوَاسِیَ وَ اَنْۢبَتْنَا فِیْهَا مِنْ کُلِّ شَیْءٍ مَّوْزُوْنٍ ﴿۱۹﴾
উচ্চারণ: ওয়াল আরদা মাদাদনা-হা-ওয়া আলকাইনা-ফীহা-রাওয়া-ছিয়া ওয়া আমবাতনা-ফীহামিন কুল্লি শাইয়িম মাওযূন।
আল বায়ান: আর যমীনকে আমি বিস্তৃত করেছি এবং তাতে সুদৃঢ় পাহাড় স্থাপন করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি সকল প্রকার বস্তু সুনির্দিষ্ট পরিমাণে ।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ১৯. আর যমীন, এটাকে আমরা বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি; এবং আমরা তাতে প্রত্যেক বস্তু উদগত করেছি সুপরিমিতভাবে,(১)
তাইসীরুল ক্বুরআন: আর পৃথিবী, আমি সেটাকে বিছিয়ে দিয়েছি আর তাতে পর্বতরাজি সংস্থাপিত করেছি আর তাতে সকল বস্তু উদগত করেছি যথাযথ পরিমাণে।
আহসানুল বায়ান: (১৯) পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করেছি এবং ওতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি; আমি ওতে প্রত্যেক বস্তু উদ্গত করেছি সুপরিমিতভাবে। [1]
মুজিবুর রহমান: পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করেছি এবং ওতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি; আমি ওতে প্রত্যেক বস্তু উৎপন্ন করেছি সুপরিমিতভাবে।
ফযলুর রহমান: আর জমিনকে আমি সুবিস্তৃত করেছি, সেখানে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রতিটি পরিমিত বস্তু উৎপন্ন করেছি।
মুহিউদ্দিন খান: আমি ভু-পৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি।
জহুরুল হক: আর পৃথিবী -- আমরা তাকে প্রসারিত করেছি, আর তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা, আর তাতে উৎপন্ন করেছি হরেক রকমের জিনিস সুপরিমিতভাবে।
Sahih International: And the earth - We have spread it and cast therein firmly set mountains and caused to grow therein [something] of every well-balanced thing.
[১১] সূরা কাফ (৫০:৭)
আরবী আয়াত
وَ الْاَرْضَ مَدَدْنٰهَا وَ اَلْقَیْنَا فِیْهَا رَوَاسِیَ وَ اَنْۢبَتْنَا فِیْهَا مِنْ کُلِّ زَوْجٍۭ بَهِیْجٍ ۙ﴿۷﴾
উচ্চারণ: ওয়াল আরদা মাদাদনা-হা-ওয়া আলকাইনা-ফীহা-রাওয়া-ছিয়া ওয়া আমবাতনা-ফীহামিন কুল্লি যাওজিম বাহীজ।
আল বায়ান: আর আমি যমীনকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক প্রকারের সুদৃশ্য উদ্ভিদ উদগত করেছি।
আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া: ৭. আর আমরা বিস্তৃত করেছি যমীনকে এবং তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা। আর তাতে উদগত করেছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ।
তাইসীরুল ক্বুরআন: আর পৃথিবী- তাকে করেছি বিস্তৃত আর তাতে সংস্থাপিত করেছি পর্বতরাজি আর তাতে উদ্গত করেছি যাবতীয় সুদৃশ্য উদ্ভিদরাজি।
আহসানুল বায়ান: (৭) আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং ওতে উদগত করেছি চোখ-জুড়ানো নানা প্রকার উদ্ভিদ। [1]
মুজিবুর রহমান: আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং ওতে উদ্গত করেছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ –
ফযলুর রহমান: জমিনকে আমি বিস্তৃত করেছি এবং তাতে সুদৃঢ় পাহাড়-পর্বত স্থাপন করেছি ও সবরকম মনোরম গাছপালা উৎপন্ন করেছি,
মুহিউদ্দিন খান: আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি।
জহুরুল হক: আর পৃথিবী -- তাকে আমরা প্রসারিত করেছি আর তাতে স্থাপন করেছি পাহাড়-পর্বত, আর তাতে আমরা জন্মিয়েছি হরেক রকমের মনোরম বস্তু --
Sahih International: And the earth - We spread it out and cast therein firmly set mountains and made grow therein [something] of every beautiful kind,
[২] তাফসীর থেকে সমতল পৃথিবীর দলীলসমূহ
[১] সূরা গাশিয়াহ (আয়াত নং ২০)
وَ اِلَی الْاَرْضِ کَیْفَ سُطِحَتْ ﴿ٝ۲۰﴾
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: ২০। এবং ভূতলের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে?[1]
তাফসীর:
[1] কেমনভাবে তাকে সমতল বানিয়ে মানুষের বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। তাতে মানুষ চলা-ফেরা ও কাজ-কারবার করে এবং আকাশ-চুম্বি উচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ করে থাকে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
نُصِبَتْ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা পর্বতমালাকে এমনভাবে মাটিতে প্রোথিত করে দিয়েছেন যাতে জমিন নড়াচড়া করতে না পারে। আর পর্বতও যেন অন্যত্র সরে যেতে না পারে।
سُطِحَتْ অর্থ : بسطت و مهرت বা বিছিয়ে ও প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর
এরপর বলা হচ্ছেঃ আর তারা কি দৃষ্টিপাত করে না পর্বতমালার দিকে যে, কিভাবে আমি ওটাকে স্থাপন করেছি? অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পর্বতমালাকে এমনভাবে মাটির বুকে প্রোথিত করে দিয়েছেন, যাতে জমিন নড়াচড়া করতে না পারে। আর পর্বতও যেন অন্যত্র সরে যেতে সক্ষম না হয়। তারপর পৃথিবীতে যেসব উপকারী কল্যাণকর জিনিস সৃষ্টি করেছেন সেদিকেও মানুষের দৃষ্টিপাত করা উচিত। আর জমিনের দিকে তাকালে তারা দেখতে পাবে যে, আল্লাহ তা'আলা কিতাবে ওটাকে বিছিয়ে দিয়েছেন! মোটকৃথা এখানে এমন সব জিনিসের কথা বলা হয়েছে যেগুলো কুরআনের প্রথম ও প্রধান সম্বোধন স্থল আরববাসীদের চোখের সামনে সব সময় থাকে। একজন বেদুঈন যখন তার উটের পিঠে সওয়ার হয়ে বেরিয়ে পড়ে তখন তার পায়ের তলায় থাকে জমীন, মাথার উপর থাকে আসমান, পাহাড় থাকে তার চোখের সামনে, সে নিজের উটের পিঠে আরোহীরূপে থাকে। এ সব কিছুতে স্রষ্টার সীমাহীন কুদরত, শিল্প নৈপুণ্য সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। আরো প্রতীয়মান হয় যে, স্রষ্টা ও প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কেউ নেই যার কাছে নত হওয়া যায়, অনুনয় বিনয় ব্রা যায়। আমরা যাকে বিপদের সময় স্মরণ করি, যার নাম জপি যার কাছে মাথানত করি তিনি একমাত্র স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ রাব্দুল আ’লামীন। তিনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। যিমাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে যে সব প্রশ্ন করেছিলেন সেগুলো এরকম কসম দিয়েই করেছিলেন।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বারবার প্রশ্ন করা আমাদের জন্যে নিষিদ্ধ হওয়ার পর আমরা মনে মনে কামনা করতাম যে, যদি বাইরে থেকে কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে আমাদের উপস্থিতিতে প্রশ্ন করতেন তবে তাঁর মুখের জবাব আমরাও শুনতে পেতাম (আর এটা আমাদের জন্য খুব খুশীর বিষয় হতো)! আকস্মিকভাবে একদিন এক দূরাগত বেদুঈন এসে রাসূলুল্লাহকে প্রশ্ন করলেনঃ হে মুহাম্মদ (সঃ)! আপনার দূত আমাদের কাছে গিয়ে বলেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন একথা নাকি আপনি বলেছেন?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ ‘সে সত্য কথাই বলেছে।” লোকটি প্রশ্ন করলোঃ “আচ্ছা, বলুন তো, আকাশ কে সৃষ্টি করেছেন?
রাসূলুল্লাহ (সঃ) জবাবে বললেনঃ “আল্লাহ।` লোকটি বললোঃ “জমীন সৃষ্টি করেছেন কে? তিনি উত্তর দিলেনঃ “আল্লাহ।” সে প্রশ্ন করলোঃ “এই পাহাড়গুলো কে স্থাপন করেছেন এবং তাতে যা কিছু করার তা করেছেন তিনি কে? তিনি জবাব দিলেনঃ “আল্লাহ।” লোকটি তখন বললোঃ “আসমান জমীন যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং পাহাড়গুলো যিনি স্থাপন করেছেন তাঁর শপথ। ঐ আল্লাহ্ই কি আপনাকে তার রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “হ্যা` লোকটি প্রশ্ন করলোঃ “আপনার দূত একথাও বলেছেন যে, আমাদের উপর দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয (এটা কি সত্য?” তিনি জবাবে বললেনঃ “হ্যা”, সে সত্য কথাই বলেছে।” লোকটি বললোঃ “যে আল্লাহ আপনাকে রাসুলরূপে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ! ঐ আল্লাহ কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি জবাব দিলেন “হ্যা”। লোকটি বললোঃ “আপনার দূত একথাও বলেছেন যে, আমাদের উপর আমাদের মালের যাকাত রয়েছে। (একথাও কি সত্য)?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, সে সত্যই বলেছে।” লোকটি বললোঃ “যে আল্লাহ আপনাকে প্রেরণ করেছেন তার কসম! তিনিই কি আপনাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি জবাবে বললেন “হ্যা` লোকটি বললোঃ “আপনার দূত আমাদেরকে এখও দিয়েছেন যে, আমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তারা যেন হজ্জব্রত পালন করে (এটাও কি সত্য?)` তিনি জবাব দিলেনঃ হ্যা” সে সত্য কথা বলেছে।” অতঃপর লোকটি যেতে লাগলো। যাওয়ার পথে সে বললো! “যে আল্লাহ আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ! আমি এগুলোর উপর কমও করবো না, বেশিও করবো না।` তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ! “লোকটি যদি সত্য কথা বলে থাকে তবে অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, লোকটি বললোঃ “আমি হলাম যিমাম ইবনে সা'লাবাহ্, বানুসা'দ ইবনে বকর (রাঃ)-এর ভাই।
তাফসীরে তাবারী
অতঃপর আল্লাহ্ পাকের বাণী :
وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ
'এবং এই ধরণী কিভাবে বিস্তীর্ণ হয়ে আছে?'
যা আমাদের চোখের সামনে বিদ্যমান।
বাশার.....আবু কাতাদাহ (রা) হতে বর্ণনা করেছেন যে,
আল্লাহ্ তাআলার বাণী:
( وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سطحتْ )
অর্থাৎ তারা কি ভূ-মণ্ডল দেখে না, কিভাবে একে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে?
যিনি আপন কুদরতের দ্বারা এতকিছু করতে সক্ষম, তিনি কি জান্নাতের মধ্যে তাঁর ইচ্ছামত সব কিছুই সৃষ্টি করতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন।
[২] সুরা আর রা'দ (আয়াত নং ৩)
وَ هُوَ الَّذِیْ مَدَّ الْاَرْضَ وَ جَعَلَ فِیْهَا رَوَاسِیَ وَ اَنْهٰرًا ؕ وَ مِنْ کُلِّ الثَّمَرٰتِ جَعَلَ فِیْهَا زَوْجَیْنِ اثْنَیْنِ یُغْشِی الَّیْلَ النَّهَارَ ؕ اِنَّ فِیْ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوْمٍ یَّتَفَکَّرُوْنَ ﴿۳﴾
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৩) তিনিই ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং ওতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন[1] এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।[2] তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।
তাফসীর:
[1] পৃথিবীর দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুমান করা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন। উঁচু ও বিশাল পর্বতমালাকে ভূপৃষ্ঠে কীলক স্বরূপ গেড়ে দেওয়া হয়েছে। নদী-নালা, সমুদ্র ও ঝর্ণাদির এমন ব্যবস্থাপনা রেখেছেন, যার দ্বারা মানুষ নিজেও উপকৃত হয় এবং ক্ষেত-বাগানও সেচন করে থাকে। ফলে বিভিন্ন প্রকারের শস্য ও ফল উৎপাদন হয়, যাদের আকার-প্রকারও ভিন্ন এবং স্বাদও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
[2] এর একটি অর্থ এই যে, নর-মাদী দুটোই বানিয়েছেন, যেমনটি আধুনিক আবিষ্কর্তারাও এর সত্যায়ন করেছেন। (জোড়ায় জোড়ায়)এর দ্বিতীয় অর্থ বিপরীতমুখী, যেমনঃ মিষ্টি-টক, ঠান্ডা-গরম, কালো-সাদা এবং সুস্বাদ-বিস্বাদ, এ ধরণের পারস্পরিক বিপরীতধর্মী বস্তু সৃষ্টি করেছেন।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
আল্লাহ তা‘আলা ঊর্ধ্বজগতের বর্ণনা দেয়ার পর এখানে নিম্নজগতের বর্ণনা দিয়েছেন যে, তিনিই জমিনকে বিস্তৃত করেছেন দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সহকারে। مَدَّ অর্থ বিস্তৃত করা। অর্থাৎ আকাশ-জমিন মিলিত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আলাদা করে পৃথিবীকে বিস্তৃত করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَوَلَمْ يَرَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْآ أَنَّ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنٰهُمَا ط وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَا۬ءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ط أَفَلَا يُؤْمِنُوْنَ )
“যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম; এবং সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?” (সূরা আম্বিয়া ২১:৩০)
উঁচু ও বিশাল পাহাড় তিনিই ভূ-পৃষ্ঠে স্থাপন করেছেন। নদী-নালা, সমুদ্র ও ঝর্ণার এমন ব্যবস্থাপনা রেখেছেন। যার দ্বারা মানুষ নিজেও উপকৃত হয় এবং ক্ষেত-খামারেও সেচন করে থাকে। এর ফলে জমিনে বিভিন্ন রং, বিভিন্ন স্বাদ ও আকারের ফল-ফলাদি উৎপন্ন হয়। এখানে (زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ) এর দু‘টো অর্থ হতে পারে। প্রথমত এর দ্বারা নর-মাদী দু‘টোই বানিয়েছেন এরকম অর্থ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমনটি আধুনিক বিজ্ঞানীরা সত্যায়ন করেছেন। আবার এর দ্বারা বিপরীতমুখী অর্থও গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন টক-মিষ্টি, ঠাণ্ডা-গরম, সুস্বাদু-বিস্বাদ, সাদা-কালো এই অর্থও গ্রহণ করা যেতে পারে।
তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। এরা পর্যায়ক্রমে আসা-যাওয়া করছে একটির আগমন ঘটছে এবং অপরটির প্রস্থান। এই সবগুলোই প্রমাণ করছে যে, সারা বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি হচ্ছেন এক আল্লাহ তা‘আলা যিনি অদ্বিতীয় ও অংশীবিহীন। আর এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানী ও চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। যদি কেউ এসব বিষয় নিয়ে সঠিকভাবে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে সে নিশ্চিত সু-পথ প্রাপ্ত হবে।
قِطَعٌ -(وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُتَجَاوِرَاتٌ)
অর্থ ভূ-খণ্ড, আর مُتَجَاوِرَاتٌ অর্থ পাশাপাশি, প্রতিবেশি। অর্থাৎ পৃথিবীতে যে ভূ-খণ্ড রয়েছে তা পরস্পর সংলগ্ন, একে অপরের পাশাপাশি ও নিকটবর্তী। তা সত্ত্বেও সর্বত্র একই রকম ফলমূল উৎপন্ন হয় না। কিছু জায়গা আছে যেখান আঙ্গুর হয়, আবার কিছু জায়গা আছে যেখান আঙ্গুর হয় না। এক দেশের খেজুর, ধান ও অন্যান্য ফলাদি আরেক দেশে হয় না। অথচ একটি পৃথিবী, একই আকাশ থেকে একই প্রকার বৃষ্টি হয়। কোন জমি খুবই উর্বর আবার কোন জমি অনুর্বর, আবার কোনটি এমন যাতে কোন ফসলই উৎপন্ন হয় না। এগুলোতে নিদর্শন রয়েছে আল্লাহ তা‘আলাকে চেনার।
صِنْوَانٌ বলা হয় যার মূল একটি কিন্তু এর শাখা-প্রশাখা অনেকগুলো। যেমন, ডালিম, ডুমুর ইত্যাদি।
(وَغَيْرُ صِنْوَانٍ)
বলা হয় যার একটিই মূল থাকে এবং তাঁর থেকে কোন শাখা-প্রশাখা বের হয় না। যেমন তালগাছ, নারিকেল গাছ, খেজুর গাছ, সুপারি গাছ ইত্যাদি। সবগুলোর জন্য অর্থাৎ
صِنْوَانٌ ও وَغَيْرُ صِنْوَانٍ
এর জন্য একই পানি থেকে সেচ দেয়া হয় অর্থাৎ বর্ষার পানি এবং একই মাটি থেকে উৎপন্ন। অথচ স্বাদের দিক দিয়ে, ছোট-বড় হওয়ার দিক দিয়ে ফলের মধ্যে বড়ই পার্থক্য রয়েছে। এগুলো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই করে থাকেন অন্য কেউ নয়।
তাফসীরে ইবনে কাসীর
উর্ধ্বজগতের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তাআ’লা এখানে নিম্ন জগতের বর্ণনা দিয়েছেন। যমীনকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বিস্তৃত করে আল্লাহ তাআ’লাই এটাকে বিছিয়ে দিয়েছেন। এতে দৃঢ় পাহাড় তিনিই স্থাপন করেছেন। এতে নদ-নদী ও প্রস্রবণ তিনিই প্রবাহিত করেছেন। এর ফলে বিভিন্ন আকারের বিভিন্ন রং এর এবং বিভিন্ন স্বাদের ফল মূলের বৃক্ষাদি সিঞ্চিত হয়ে থাকে। জোড়ায় জোড়ায় ফলমূল তিনিই সৃষ্টি করেছেন। ওগুলির মধ্যে কোনটি মিষ্টি এবং কোনটি টক। দিবস ও রজনী পর্যায়ক্রমে আসা যাওয়া করছে। একটির আগমন ঘটছে এবং অপরটির প্রস্থান হচ্ছে। এইসব ব্যবস্থাপনা সেই ব্যাপক ক্ষমতাবান আল্লাহর দ্বারাই হচ্ছে। আল্লাহ তাআ’লার এইসব নিদর্শন, নিপুণতা এবং প্রমাণাদির উপর যে ব্যক্তি চিন্তাপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে সে অবশ্যই সুপথ প্রাপ্ত হবে। যমীনের খণ্ডগুলি মিলিতভাবে রয়েছে। মহান আল্লাহর শক্তি দেখে বিস্মিত হতে হয় যে, পৃথিবীর এক খণ্ডে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হয়, আবার আর একখণ্ডে কিছুই জন্মে না। কোন জায়গার মাটি লাল, কোন জায়গার মাটি সাদা, কোন মাটি কালো, কোনটি কংকরময়, কোনটা নরম, কোনটা শক্ত, কোনটা মিষ্টি, কোনটা তিক্ত, কোনটা বালুকাময় এবং কোনটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মোট কথা, এটাও সৃষ্টিকর্তার মহা শক্তির নিদর্শন, যা বলে দিচ্ছে যে, কার্য্য সম্পাদনকারী, স্বেচ্ছাচারী এবং সারা বিশ্বের একচ্ছত্র অধিপতি হচ্ছেন সেই একক, অদ্বিতীয় এবং অংশীবিহীন আল্লাহ। তিনিই হচ্ছেন সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা। তিনি ছাড়া অন্য কেউ মা'বুদ নেই এবং কোন প্রতিপালকও নেই।
তাফসীরে তাবারী
* * *
আবু জাফর আত তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
মহান আল্লাহ তাঁর বাণীতে বলেছেন:
"والله الذي مَدَّ الأرض"
"আর আল্লাহই পৃথিবীকে প্রসারিত করেছেন,"
অর্থাৎ তিনি এটাকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বিস্তৃত করেছেন।
* * *
আর তাঁর বাণী:
(وجعل فيها رواسي)
"এবং তাতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা," (সূরা রাদ: ৩)
মহান আল্লাহ বলেন: তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন।
* * *
"رواسي" (পর্বতমালা) হলো "راسية" (দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত) শব্দের বহুবচন। এটি দ্বারা এমন বস্তুকে বোঝায় যা অটল।
যেমন বলা হয়, "أرسيت الوتد في الأرض" অর্থাৎ "আমি মাটিতে খুঁটি দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছি।" ["الإرساء" (স্থাপন) সম্পর্কে পূর্বের ব্যাখ্যা দেখুন ১৩:২৯৩।
যেমন একজন কবি বলেছেন: (এটি আল-আহওয়াসের কবিতা। )
بِهِ خَالِدَاتٌ مَا يَرِمْنَ وَهَامِدٌ
وَأَشْعَثُ أَرْسَتْهُ الْوَلِيدَةُ بِالْفِهْرِ
অর্থাৎ, "সেখানে রয়েছে অটল পাথর যা স্থানচ্যুত হয় না, আর রয়েছে জমাটবদ্ধ ছাই।
আর একটি কাঠের খুঁটি, যা একটি দাসী পাথর দিয়ে পুঁতে দিয়েছে।"
(" الخالدات" ও " الخوالد" হলো চুল্লির পাথর, যা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী থাকে। "ما يرمن" অর্থ—"সেগুলো স্থানচ্যুত হয় না। "الهامد" হলো জমাটবদ্ধ ছাই। " الأشعث" হলো কাঠের খুঁটি, যার মাথা ফাটানো হলে তা ছড়িয়ে পড়ে। "الوليدة" হলো দাসী, আর "الفهر" হলো হাতের মুঠোয় ধরা পাথর, যা দিয়ে খুঁটি পোতা হয়। )
এখানে "أَرْسَتْهُ" অর্থ হলো "সেটিকে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছে।"
* * *
আর তাঁর বাণী:
(وأنهارًا)
"এবং নদীনালা," (সূরা রাদ: ৩)
অর্থাৎ, তিনি পৃথিবীতে প্রবাহিত পানির নদী সৃষ্টি করেছেন। ......
* * *
[৩] সুরা আন নাযিয়াত (আয়াত নং ৩০)
وَ الْاَرْضَ بَعْدَ ذٰلِکَ دَحٰىهَا ﴿ؕ۳۰﴾
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: ৩০। এবং তারপর তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন।[1]
তাফসীর:
[1] পূর্বে হা-মীম সিজদার ৯ আয়াতে উল্লেখ হয়েছে যে, خلق (সৃষ্টি করা) এক জিনিস এবং دحى (সমতল, বিস্তৃত ও বাসোপযোগী করা) করা অন্য এক জিনিস। পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে আকাশের পূর্বে। কিন্তু তাকে বিস্তৃত করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টির পর। এখানে সেই তত্ত্বই বর্ণিত হয়েছে। সমতল ও বিস্তৃত করার মানে হল, পৃথিবীকে সৃষ্টির বাসোপযোগী করার জন্য যে সমস্ত জিনিসের প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা তার প্রতি গুরুত্ব দিলেন। যেমন, যমীন থেকে পানি নির্গত করলেন অতঃপর তা হতে নানা খাদ্যসামগ্রী উৎপন্ন করলেন। পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ মজবুতভাবে যমীনে গেড়ে দিলেন যাতে যমীনটা না হিলে। যেমন, আগামী আয়াতসমূহে এর বর্ণনা রয়েছে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
دَحَاهَا অর্থাৎ জমিনকে বিস্তৃত করেছেন। এ আয়াত প্রমাণ করে যে, জমিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে আকাশ সৃষ্টি করার পর। এ আয়াত এবং ثم استوي إلي السماء এ আয়াতের মাঝে কোন বৈপরিত্য নেই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে জমিনকে অবিস্তৃত অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন, তারপর আকাশ সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর জমিনকে বিস্তৃত করেছেন। অনেক বিদ্বানগণ বলেছেন : এখানে بعد বা পরে শব্দটি مع বা সাথে অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ তিনি আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, দিন ও রাত ইত্যাদি সৃষ্টি করার সাথে সাথে জমিনকে বিস্তৃত করেছেন। যেমন নিন্মোক্ত আয়াতগুলোতে بعد বা পরে শব্দটি مع বা সাথে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।তাফসীরে ইবনে কাসীর
وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحٰىهَا
অর্থাৎ ইহার পর পৃথিবীকে বিস্তৃত করিয়াছেন।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় পরবর্তী আয়াতে বলা হইয়াছে:
أخْرَجَ مِنْهَا مَاءَهَا وَمَرْعُهَا
অর্থাৎ পৃথিবী হতে তিনি বহির্গত করিয়াছেন পানি ও তৃণ।
উল্লেখ্য যে, সূরা হামীম সাজদায় বলা হইয়াছে যে, পৃথিবীকে আকাশ সৃষ্টির পূর্বে সৃষ্টি করা হইয়াছে। কিন্তু পৃথিবীর বিস্তার ও নিয়ামতের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হইয়াছে আকাশ সৃষ্টির পরে। ইব্ন আব্বাস (রা) সহ আরো অনেক হইতে এইরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়। ইবনু জারীর তাবারী (রহ.)-ও ইহাই পছন্দ করিয়াছেন।
তাফসীরে তাবারী
অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলার বাণী:
وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا
অর্থাৎ অতঃপর তিনি যমীনকে বিস্তীর্ণ করেছেন। মুফাসসিরগণ আল্লাহ্ তা'আলার বাণী: بعد ذلك অর্থাৎ অতঃপর এর মধ্যে মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, আসমান সৃষ্টির পর আল্লাহ্ পাক যমীনকে সৃজন ও বিস্তীর্ণ করেছেন।
আলী.... ইব্ন আব্বাস (রা) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ্ পাক যেখানে আসমান সৃষ্টির পূর্বে যমীন সৃষ্টির কথা বলেছেন, বা যমীন সৃষ্টির পূর্বে আসমান সৃষ্টির কথা বলেছেন এর তাৎপর্য এই যে, আল্লাহ্ পাক যমীনকে বিস্তৃত করার পূর্বে এর মূল অংশকে আসমান সৃষ্টির আগে তৈরি করেন। অতঃপর তিনি আকাশকে সপ্তস্তরে বিন্যাস করার পর যমীনকে বিস্তৃত করেন। এটাই وَالْأَرْضُ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا -এর অর্থ।
মুহাম্মদ ইবন সা'দ..... ইব্ন আব্বাস (রা) হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর বাণী: وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا -এর অর্থ হলো আল্লাহ্ তা'আলা আসমান ও যমীনকে সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ তিনি যমীনকে বিস্তৃত ও আসমান তৈরির আগে যমীনের মূল অংশকে তৈরি করেন। অতঃপর তিনি আসমান সৃষ্টি ও একে সপ্ত স্তরে সুবিন্যস্ত করার পর যমীনকে বিস্তৃত করেন এবং তার উপর পাহাড়-পর্বত সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। অতঃপর তিনি যমীনকে বৃক্ষ-লতাদি উৎপাদনের উপযুক্ত করে তৈরি করেন। যেমন পরবর্তী আয়াতে উল্লেখ আছে : وآخْرَجَ مِنْهَا مَاءَهَا وَمَرْعَهَا অর্থাৎ তিনি তা থেকে এর পানি ও উদ্ভিদ খাদ্য বের করেছেন।
ইব্ন হুমায়দ...... ইব্ন আব্বাস (রা) হতে বর্ণনা করেছেন যে, দুনিয়া সৃষ্টির এক হাজার বৎসর পূর্বে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন চারটি স্তম্ভের উপর তাঁর ঘর বা বায়তুল্লাহ্র বুনিয়াদ পানির উপর রাখেন। অতঃপর বায়তুল্লাহ্ নীচ থেকে ক্রমান্বয়ে তিনি যমীনকে বিস্তৃত ও সম্প্রসারিত করেন।
ইবন হুমায়দ...... আবদুল্লাহ্ ইব্ন আমর হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা তাঁর ঘরকে পৃথিবী সৃষ্টির এক হাজার বৎসর পূর্বে সৃষ্টি করেন এবং 'বায়তুল্লাহ্' হতে যমিন সম্প্রসারণ ও বিস্তৃত করার কাজ শুরু করেন।
অবশ্য কারো কারো মতে, আল্লাহ্র কালাম: وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا এই আয়াতে বর্ণিত بعد অর্থাৎ পরে শব্দের স্থানে مع বা 'সাথে' শব্দের অর্থ হবে। তাদের মতে আসমান সৃষ্টির আগে যমীন সৃষ্টি ও বিস্তৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ্ পাকের কালামের দ্বারা বুঝা যায়। যথা:
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَوَات .
অর্থাৎ 'তিনিই আল্লাহ্! যিনি যমীনের সবকিছু তোমাদের উপকারার্থে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আসমানের দিকে ইচ্ছা করেন এবং একে সপ্তস্তরে সুবিন্যস্ত করেছেন।'
অতএব এই আয়াতে দেখা যায় যে, আল্লাহ্ পাক যমীন সৃষ্টির পরে আসমান সৃষ্টি ও সুবিন্যস্ত করেছেন। অতঃপর প্রশ্ন আসে যে, বাস্তব ব্যাপার যদি এটাই হয় তবে আল্লাহ্ পাক আবার এরূপ কেন বলেন: الْأَرْضُ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَامًا', অর্থাৎ 'অতঃপর তিনি যমীনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।'
এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আমি আগেই বর্ণনা করেছি যে, এখানে بعد শব্দের অর্থ পরে হবে না, বরং مع বা 'সাথে' হবে অর্থাৎ وَالْأَرْضَ مَعَ ذَلِكَ دَحَاهَا এর অর্থ হবে, কেননা কুরআন মাজীদে এ ধরনের বাগধারা বা কথার পদ্ধতি একাধিক রয়েছে।
যেমন: عتل بعد ذلك زينم অর্থাৎ 'দুর্ধর্ষ অত্যাচারী সাথে সাথে বদজাতও।'
অর্থাৎ مع ذلك زينم এরূপ কেউ যদি কাউকে বলে 'তুমি আহমক অতঃপর তুমি অসম্মানিত।' এখানেও পরে শব্দের অর্থ অতঃপর বা সাথে হয়েছে।
একইভাবে আল্লাহ তায়ালার বাণী:
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِنْ بعد الذِّكْرِ এখানে অর্থে بعد الذكر না হয়ে قبل الذكر এর অর্থ হবে।
যেমন কবি হুযালি তার কবিতায় বলেছেন:
حمدت الهي بعد عروة اذنجا + حراش وبعض الشر أهون من بعض.
অর্থাৎ 'আমি ওরওয়ার পূর্বে আমার প্রভুর প্রশংসা করেছিলাম, যখন হারাশ মুক্তি পেয়েছিল। এ সময় দুষ্টেরা একে অপরের দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত হচ্ছিল।'
এখানে অর্থে بعد عروة বা ওরওয়ার পরে না হয়ে ل قبل عروة ওরওয়ার পূর্বের অর্থ হবে।
আবু কুরাইব...... মুজাহিদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর বাণী : وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا -এর অর্থ مَعْ ذَلِكَ دَحَاهَا
ইব্ন বাশার...... মুজাহিদ হতে বর্ণনা করেছন যে, আল্লাহ্ কালাম : وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا -এর অর্থ عندَ ذَلِكَ دَحَاهَا
আবদুর রহমান ইব্ন আবদুল্লাহ্ ইব্ন আবদুল হাকিম...... মুজাহিদ হতে বর্ণনা করেছেন যে,
আল্লাহর বানীঃ - وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا
এর অর্থ করেছেন مَعَ ذَلِكَ دَحَاهَا
মুহাম্মদ ইব্ন খাল্ফ আস্কালানী....... সুদ্দী হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর কালাম : وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا এখানে بعد বা 'পরে' শব্দটির স্থানে مع বা 'সাথে' শব্দের অর্থ হবে।
যথা : وَالْأَرْضُ بَعْدَ ذلِكَ دَحَاهَا
ইব্ন আব্বাস (রা) হতে আল্লাহ পাকের যে কালাম সম্পর্কে আগে উল্লেখ হয়েছে যথাঃ
خلق الأرض، وقدّر فيها أقواتها
অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক যমীন সৃষ্টির পর, তিনি এর মধ্যে এর শক্তির উৎসের সৃষ্টি করেন। এ সময় তিনি যমীনকে বিস্তৃত বা বিস্তীর্ণ করেন নাই। অতঃপর তিনি আসমানের দিকে ইচ্ছা করেন এবং একে সপ্তস্তরে সুবিন্যস্ত করেন এবং এর পর যমীনকে বিস্তৃত করেন। তারপর তিনি তা থেকে এর পানি ও উদ্ভিদ খাদ্য বা চারণভূমি বের করেন এবং এরপর পাহাড়-পর্বতকে এর উপর সুপ্রতিষ্ঠিত করেন ইত্যাদি যা আয়াতের প্রকাশ্য অর্থে বুঝা যায়।
অতঃপর আল্লাহ জাল্লা শানুহুর কালাম যথা:
وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا
এখানে এটা সুপ্রসিদ্ধ যে, بعد শব্দে অর্থ قبل শব্দের বিপরীত। কেননা بعد অর্থ পরে এবং قبل অর্থ পূর্বে। যদি যমীনের বিস্তৃতি সপ্তাকাশ সৃষ্টি ও সুবিন্যস্ত করার পর না হয়, তবে আয়াতের অর্থের মধ্যে সংগতি থাকে না।
যেমন উল্লেখ আছে:
رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّاهَا - وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ ضُحَاهَا - وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا
অর্থাৎ 'তিনি আকাশকে সুউচ্চ ও সুবিন্যস্ত করেছেন, তিনি এর রাত্রিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং দিনকে প্রকাশ করেছেন। অতঃপর তিনি যমীনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।' কেননা আহলে আরবদের পরিভাষায় مد ও دحو শব্দের অর্থ হলো بسط বা বিস্তৃত।
যেমন উমাইয়া ইব্ন আবূ সালতের কবিতায় দেখা যায়ঃ
دار دحاها ثم اعمر نابها + واقام بالاخرى التي هي امجد.
অর্থাৎ 'আমরা ঘরকে ভাংগার পর এর মাটিকে বিস্তৃত করি অতঃপর সেখানে নতুন ঘর তৈরি করি, যা পূর্বের ঘর থেকে উত্তম।'
আরবী আভিধানিক পরিভাষায় دحو শব্দটির রূপান্তর দু'ভাবে লক্ষ্য করা যায়। যথা: يدحو دَحًا অতঃপর ا دَحْيا أَدْحًا دَحِيَتْ دَحْوا
আউস ইব্ন হাজার বৃষ্টির বর্ণনায় যেমন - শব্দের প্রয়োগ করেছেন। যথা:
يبقى الحصا عن جديد الارض مندرت + كانه فاحص اولاعث داح .
অর্থাৎ 'বৃষ্টির পানিতে নতুন মাটি ধুয়ে পানির সাথে চলে যাওয়াতে কেবল মাটির সাথে মিশ্রিত পাথরের নুড়িগুলি অবশিষ্ট রয়েছে, যেগুলি পরের দোষ অন্বেষণকারীর ন্যায় প্রকাশমান।'
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ এরূপ বিভিন্ন প্রকার অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বাশার...... আবু কাতাদাহ (রা) হতে বর্ণনা করেছেন যে,
আল্লাহর বাণী:
وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا
এই আয়াতের دَحَاهَا শব্দের অর্থ بسطها অর্থাৎ একে বিস্তৃত করেছেন।
মুহাম্মদ ইব্ন খাল...... সুদ্দী হতে বর্ণনা করেছেন যে এ শব্দে অর্থ হলো بسطها
ইবন বাশার......হতেও একইরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
ইউনুস...... ইব্ন যায়দ হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ পাকের কালাম: دَحَاهَا শব্দের অর্থ হলো উদ্ভিদ বা খাদ্যশস্য উদ্গত হওয়ার কারণে যমীন ফেটে যাওয়া। যেমন
আল্লাহ পাকের কালামের পরবর্তী আয়াতে উল্লেখ আছে। যথা: اَخْرَجَ مِنْهَا مَاءَهَا وَمَرْعَهَا অর্থাৎ 'তিনি তা থেকে এর পানি ও খাদ্যশস্য বের করেছেন', এ প্রসঙ্গে তিনি আল্লাহ পাকের বিভিন্ন বাণী যথা : فَاكِهَةً وَأَبًا ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًا পর্যন্ত তিলাওয়াত করেন। এভাবে আল্লাহ্ পাক যখন যমীনকে দ্বিধাবিভক্ত করেন, তখন তা থেকে ফসলাদি উৎপন্ন হতে থাকে। এছাড়া তিনি আরো তিলাওয়াত করেন, যথা : وَالْأَرْضِ ذَاتِ الصَّدْعِ অর্থাৎ 'যমীন ও দ্বিধাবিভক্তশীল বস্তু।'
অতঃপর আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলার বাণী: أَخْرَجَ مِنْهَا مَاءَهَا -এর অর্থ হলো তিনি তা থেকে এর নদী বা প্রস্রবণ প্রবাহিত করেন' এবং وَمَرْعاها শব্দে অর্থ হলো তিনি তা থেকে উদ্ভিদ ও ফসলাদি উৎপন্ন করেন। এটাই মুফাসসিরগণের নিকট উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা।
হুসায়ন...... যাহ্হাক হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ্ বাণী: أَخْرَجَ مِنْهَا مَاءَهَا -এর অর্থ হলো আল্লাহ্ তা'আলা যমীন হতে নদ-নদী ও প্রস্রবণ প্রবাহিত এবং উদ্ভিদ ও ফসলাদি নির্গত করেছেন।
অতঃপর আল্লাহ্ পাকের কালাম, যথা : وَالْجِبَالَ أَرْسَاهَا অর্থাৎ 'তিনি এতে পর্বতকে দৃঢ়ভাবে সংস্থাপন করেছেন।'
বাশার....... আবু কাতাদাহ (রা) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর বাণী : وَالْجِبَالَ أَرْسَاهَا এর অর্থ হলো তিনি পর্বতরাজীকে এ জন্য যমীনের উপর সৃষ্টি করেছেন, যাতে যমীন তার বাসিন্দাদের নিয়ে স্থির হয়ে থাকে।
ইব্ন হুমায়দ...... আলী হতে বর্ণনা করেছেন যে, যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যমীনকে সৃষ্টি করেন, তখন যমীন এ বলে আল্লাহ্র দরবারে অভিযোগ পেশ করে যে, ইয়া আল্লাহ! আপনি আদম (আ) এবং তাঁর বংশধরদেরকে আমার পিঠের উপর বসবাস করার জন্য তৈরি করেছেন, যারা আমার উপর পেশাব-পায়খানা ও পাপের কাজও করবে। অতঃপর আল্লাহ পাক একে এমনভাবে তৈরি করেন, যার কিছু অংশ তোমরা দেখতে পাচ্ছ এবং এর এমন অনেকাংশ রয়েছে, যা তোমরা দেখতে পাও না এবং যে সম্পর্কে কোন খোঁজ-খবর ও অভিজ্ঞতা রাখ না। অতঃপব দুনিয়ায় প্রথমে বকরীর গোশত ও পরে উটের গোশত বৈধ করা হয়।
[৪] সূরা নাবা (আয়াত নং ৬)
اَلَمْ نَجْعَلِ الْاَرْضَ مِهٰدًا ۙ﴿۶﴾
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: ৬। আমি কি পৃথিবীকে শয্যা (স্বরূপ) সৃষ্টি করিনি? [1]
তাফসীর:
[1] অর্থাৎ, বিছানার মত তোমরা ভূপৃষ্ঠের উপর চলা-ফেরা কর, উঠা-বসা কর, শয়ন কর এবং সমস্ত কাজ-কর্ম করে থাক। পৃথিবীকে তিনি বিক্ষিপ্তভাবে হেলা-দোলা থেকে রক্ষা করেছেন।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বড় বড় কয়েকটি নিদর্শনের বিবরণ দিচ্ছেন যাতে মানুষ সহজেই কিয়ামত সংঘঠিত হওয়ার সত্যতা অনুধাবন করতে পারে। তিনি জমিনকে সৃষ্টি করেছেন مِهَادًا বা বিছানাস্বরূপ। এজন্য মায়ের কোলকে مهد বা বিছানা বলা হয়। কারণ মায়ের কোল শিশুর বিছানা, সেখানে সে ঘুমায়। তাই ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে বলা হয়েছে :
(وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَّمِنَ الصّٰلِحِيْنَ)
“আর তিনি শৈশবে (মায়ের কোলে) এবং বার্ধক্যে মানুষের সাথে কথা বলবেন এবং নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।” (সূরা আলি ইমরান ৩ : ৪৬)
أَوْتَادًا শব্দটি وتد এর বহুবচন, অর্থ হলো পেরেক। অর্থাৎ পাহাড়কে তিনি পেরেকস্বরূপ সৃষ্টি করেছেন যাতে জমিন নড়াচড়া করতে না পারে। কেননা পৃথিবী নড়াচড়া করলে বসবাস করা সম্ভব হতো না। এ বিশাল ও বিস্ময়কর সৃষ্টি যিনি প্রথমবার অস্তিত্বে এনেছেন কেবল একটা হুকুম ‘কুন ফা-ইয়াকুন’ (হও, অতএব হয়ে গেল) এর মাধ্যমে, সুতরাং তাঁর পক্ষে মানুষের মত একটা ক্ষুদ্র জীবকে পুনরায় সৃষ্টি করা ও পুনরুত্থান ঘটানো কোন ব্যাপারই নয়।
তাফসীরে ইবনে কাসীর
এরপর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বিস্ময়কর সৃষ্টির সূক্ষ্মতার বর্ণনা দেয়ার পর নিজের আজীমুশশান ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন, যার দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, তিনি এসব জিনিস কোন নমুনা ছাড়াই প্রথমবার যখন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তখন তিনি দ্বিতীয়বারও ওগুলো সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন। তাই তো তিনি বলেনঃ আমি কি ভূমিকে শয্যা (রূপে) নির্মাণ করিনি?' অর্থাৎ আমি সমস্ত সৃষ্টজীবের জন্যে এই ভূমিকে কি সমতল করে বিছিয়ে দিইনি? এই ভাবে যে, ওটা তোমাদের সামনে বিনীত ও অনুগত রয়েছে। নড়াচড়া না করে নীরবে পড়ে রয়েছে। আর পাহাড়কে আমি এই ভূমির জন্যে পেরেক বা কীলক করেছি যাতে এটা হেলাদোলা না করতে পারে এবং ওর উপর বসবাসকারীরা যেন উদ্বিগ্ন হয়ে না পড়ে।
[৫] সূরা ত্ব-হা (আয়াত নং ৫৩)
الَّذِیْ جَعَلَ لَکُمُ الْاَرْضَ مَهْدًا وَّ سَلَکَ لَکُمْ فِیْهَا سُبُلًا وَّ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ؕ فَاَخْرَجْنَا بِهٖۤ اَزْوَاجًا مِّنْ نَّبَاتٍ شَتّٰی ﴿۵۳﴾
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: (৫৩) যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের চলবার পথ। তিনি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং আমি তা দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।
তাফসীর:
-
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
অতঃপর মূসা (عليه السلام) আরো বর্ণনা করে দিচ্ছেন, আমি সে আল্লাহ তা‘আলার দিকে দাওয়াত দিচ্ছি যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের জন্য চলাচলের পথ। তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন আর আমরা তা দ্বারা বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেন। যা তোমরা আহার কর। তোমাদের গবাদি পশু চরাও।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
ھُوَ الَّذِیْٓ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَا۬ئِ مَا۬ئً لَّکُمْ مِّنْھُ شَرَابٌ وَّمِنْھُ شَجَرٌ فِیْھِ تُسِیْمُوْنَﭙیُنْۭبِتُ لَکُمْ بِھِ الزَّرْعَ وَالزَّیْتُوْنَ وَالنَّخِیْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ کُلِّ الثَّمَرٰتِﺚ اِنَّ فِیْ ذٰلِکَ لَاٰیَةً لِّقَوْمٍ یَّتَفَکَّرُوْنَ
“তিনিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশু চারণ করে থাকো। তিনি তোমাদের জন্য সেটার দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তুন, খেজুর বৃক্ষ, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।” (সূরা নাহল ১৬:১০-১১)
তাফসীরে ইবনে কাসীর
মূসা (আঃ) ফিরাউনের প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ তাআলার গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে আরো বলেনঃ ঐ আল্লাহই যমীনকে লোকদের জন্যে বিছানা বানিয়েছেন। (আরবী) শব্দটি অন্য কিরআতে (আরবী) ও রয়েছে ।
মহান আল্লাহ যমীনকে বিছানারূপে বানিয়ে দিয়েছেন, যেন তোমরা তার উপর স্থির থাকতে পারো এবং ওরই উপর শুইতে, বসতে ও চলা ফেরা করতে পারো। তিনি যমীনে তোমাদের চলা ফেরা ও সফর করার জন্যে পথ বানিয়ে দিয়েছেন, যাতে তোমরা পথ ভুলে না যাও এবং সহজেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারো। তিনিই আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন এবং এর মাধ্যমে যমীন হতে বিভিন্ন প্রকারের ফসল উৎপন্ন করেন। তোমরা তা নিজেরা খেয়ে থাকো এবং তোমাদের গবাদি পশু গুলিকেও আহার করিয়ে থাকো। তোমাদের খাদ্য, ফল-ফলাদি এবং তোমাদের জীব জন্তুর চারা-ভূষি শুষ্ক ও সিক্ত সবকিছুই এই বৃষ্টির মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা উৎপন্ন করে থাকেন। এই সব নিদর্শন দলীল হচ্ছে আল্লাহর আল্লাহ হওয়ার এবং তার একত্ব ও অস্তিত্বের উপর।
[৬] সূরা আয-যারিয়াত (আয়াত নং ৪৮)
وَ الْاَرْضَ فَرَشْنٰهَا فَنِعْمَ الْمٰهِدُوْنَ ﴿۴۸﴾
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অনুবাদ: ৪৮. আর যমীন, আমরা তাকে বিছিয়ে দিয়েছি, অতঃপর কত সুন্দর ব্যবস্থাপনাকারী(১) (আমরা)!
তাফসীর:
(১) مَاهِدُونَ শব্দের অর্থ দুটি। এক. বিছানার মত সুন্দরভাবে বিছিয়ে দেয়া। দুই. সুন্দর ব্যবস্থাপনা তৈরী করা [দেখুন, কুরতুবী]।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ
আর তিনি জমিনকে বিছিয়ে দিয়েছেন যাতে চলাচলের উপযোগী হয়। আর তিনি প্রতিটি প্রাণীকে জোড়ায় জোড়ায় তথা নর ও নারীরূপে সৃষ্টি করেছেন।
অতএব যে আল্লাহ তা‘আলা এসব কিছু করেছেন তার কাছে ফিরে যাও, সৎ কাজ কর ও অসৎ কাজ বর্জনের মাধ্যমে তার কাছেই তাওবা কর।
আল্লাহ তা‘আলা আবার আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যেন কোন ক্রমেই আমরা তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন না করি।
তাফসীরে ইবনে কাসীর
মহান আল্লাহ বলেনঃ যমীনকে আমি আমার সৃষ্টজীবের জন্যে বিছানা বানিয়েছি। আর একে বানিয়েছি অতি উত্তম বিছানা। সমস্ত মাখলককে জোড়া জোড়া করে সষ্টি করেছি। যেমন আসমান ও যমীন, দিবস ও রজনী, সূর্য ও চন্দ্র, জল ও স্থল, আলো ও অন্ধকার, ঈমান ও কুফর, জীবন ও মৃত্যু, পাপ ও পুণ্য, জান্নাত ও জাহান্নাম, এমন কি জীব-জন্তু এবং উদ্ভিদের মধ্যেও জোড়া রয়েছে। এটা এ জন্যে যে, যেন তোমরা উপদেশ লাভ কর। তোমরা যেন জেনে নাও যে, এসবের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ। তিনি শরীক বিহীন ও একক। সুতরাং তোমরা তার দিকে দৌড়িয়ে যাও এবং তারই প্রতি মনোযোগী হও। আমার নবী (সঃ) তো তোমাদেরকে স্পষ্ট সতর্ককারী। সাবধান! তোমরা আল্লাহর সাথে কোন মাবুদ স্থির করো না। আমার রাসূল (সঃ) তো তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে স্পষ্ট ভয় প্রদর্শনকারী।
[৩] হাদীস থেকে সমতল পৃথিবীর দলীলসমূহ
[১] সুনান আত তিরমিযী (হাদীস নং ৬১৯ শামেলা)
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ الْحَمِيدِ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ كُنَّا نَتَمَنَّى أَنْ يَأْتِيَ، الأَعْرَابِيُّ الْعَاقِلُ فَيَسْأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ عِنْدَهُ فَبَيْنَا نَحْنُ عَلَى ذَلِكَ إِذْ أَتَاهُ أَعْرَابِيٌّ فَجَثَا بَيْنَ يَدَىِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ رَسُولَكَ أَتَانَا فَزَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللَّهَ أَرْسَلَكَ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَبِالَّذِي رَفَعَ السَّمَاءَ وَبَسَطَ الأَرْضَ وَنَصَبَ الْجِبَالَ آللَّهُ أَرْسَلَكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا صَوْمَ شَهْرٍ فِي السَّنَةِ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " صَدَقَ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا فِي أَمْوَالِنَا الزَّكَاةَ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " صَدَقَ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا الْحَجَّ إِلَى الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . قَالَ فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَعَمْ " . فَقَالَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لاَ أَدَعُ مِنْهُنَّ شَيْئًا وَلاَ أُجَاوِزُهُنَّ . ثُمَّ وَثَبَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِنْ صَدَقَ الأَعْرَابِيُّ دَخَلَ الْجَنَّةَ " .
قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ هَذَا الْوَجْهِ عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . سَمِعْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ يَقُولُ قَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ فِقْهُ هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ الْقِرَاءَةَ عَلَى الْعَالِمِ وَالْعَرْضَ عَلَيْهِ جَائِزٌ مِثْلُ السَّمَاعِ . وَاحْتَجَّ بِأَنَّ الأَعْرَابِيَّ عَرَضَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَقَرَّ بِهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم .
-----------------------------
تحقيق الشيخ ناصر الدين الألباني: صحيح
تحقيق الشيخ زبیر العلیزي الباكستاني: متفق علیہ
تحقيق الشيخ شعيب الأرناؤوط: حديث صحيح، وأخرجه البخاري (63)، ومسلم (12) (10)، وأبو داود (486)، وابن ماجه (1402)، والنسائي 4/ 121 - 122، ولفظ البخاري وأبي داود وابن ماجه بنحو لفظ المصنف، وهو في "مسند أحمد" (12457)، و"صحيح ابن حبان" (155).
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইচ্ছা করতাম, আমাদের উপস্থিত থাকা অবস্থায় কোন বুদ্ধিমান বেদুঈন এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করুক!
এমন সময় এক বেদুঈন হাযির হল। সে তার হাঁটু গেড়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে বসল।
সে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের নিকট আপনার প্রতিনিধি এসে বলল, আপনি দাবি করছেন, ‘আপনাকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল করে পাঠিয়েছেন?
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, সেই সত্তার শপথ, যিনি আকাশসমূহ সমুন্নত করেছেন, যমীনকে বিস্তৃত করেছেন এবং পাহাড়সমূহ দাঁড় করিয়েছেন, সত্যিই কি আপনাকে আল্লাহ তা’আলা তার রাসূল করে পাঠিয়েছেন?
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, আমাদেরকে আপনার প্রতিনিধি বলেছে, আপনি মনে করেন আমাদের উপর দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায বাধ্যতামূলক।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন! আল্লাহ কি এই প্রসঙ্গে আপনাকে আদেশ করেছেন?
তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
বেদুঈন বলল, আমাদেরকে আপনার প্রতিনিধি বলেছে, আপনি মনে করেন বছরে এক মাস আমাদের উপর রোযা বাধ্যতামূলক।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে সঠিক বলেছে।
লোকটি বলল, সেই সত্তার শপথ, আপনাকে যিনি পাঠিয়েছেন! আল্লাহ তা’আলা কি এই প্রসঙ্গে আপনাকে আদেশ করেছেন?
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ।
সে বলল, আমাদেরকে আপনার প্রতিনিধি বলেছে, আপনি মনে করেন আমাদের ধনদৌলতের উপর যাকাত বাধ্যতামূলক।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে সত্য বলেছে!
বেদুঈন বলল, সেই সত্তার শপথ, আপনাকে যিনি রাসূল করে পাঠিয়েছেন! আল্লাহ তা’আলা কি এই প্রসঙ্গে আপনাকে আদেশ করেছেন?
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ।
সে বলল, আমাদেরকে আপনার প্রতিনিধি বলেছে, আমাদের মধ্যে যে লোক দূরত্ব অতিক্রম করার (আর্থিক ও দৈহিক) যোগ্যতা রাখে আপনি মনে করেন তার জন্য বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ বাধ্যতামূলক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ।
বেদুঈন বলল, সেই সত্তার শপথ, আপনাকে যিনি রাসূল করে পাঠিয়েছেন! আল্লাহ তা’আলা কি আপনাকে এই প্রসঙ্গে আদেশ করেছেন।
তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
লোকটি বলল, সেই সত্তার শপথ, আপনাকে যিনি সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন! আমি এগুলোর কোনটিই ছাড়বো না এবং এগুলোর সীমাও পার করব না। তারপর সে তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এই বেদুঈন যদি সত্য বলে থাকে তবে সে জান্নাতে যাবে।
আবূ ঈসা বলেন, উল্লেখিত সনদে হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীসটি অন্যান্য সূত্রেও আনাস (রাঃ) হতে এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। আমি একথা মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল বুখারীকে বলতে শুনেছি যে, একদল মুহাদীস বলেন, এ হাদীসের একটি আইনগত (ফিক্হী) দিক এই যে, উস্তাদের নিকট পাঠ করা এবং তা তার শুনা উস্তাদের নিকট হতে শুনার মতই গ্রহণযোগ্য।
তারা উক্ত হাদীস দলীল হিসাবে উপস্থাপন করে বলেন, এই বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে (বর্ণনা) উপস্থাপন করল, আর তিনি তার সত্যতা স্বীকার করলেন।
-----------------------------
তাহক্বীক শায়খ নাসির উদ্দিন আল-আলবানী : সহীহ।
তাহক্বীক হাফিয যুবাইর আলী যাঈ : মুত্তাফাক্বুন আলাইহি।
তাহক্বীক শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত্ব : হাদীসটি সহীহ।
[২] সুনান আদ দারেমী (হাদীস নং ৬৭৩ হাদীসবিডি, ৬৭৬ শামেলা)
أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ الْحَمِيدِ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لَمَّا نُهِينَا أَنْ نَبْتَدِئَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ يُعْجِبُنَا أَنْ يَقْدُمَ الْبَدَوِيُّ وَالْأَعْرَابِيُّ الْعَاقِلُ، فَيَسْأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَنَحْنُ عِنْدَهُ، فَبَيْنَا نَحْنُ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ، فَجَثَا بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّ رَسُولَكَ أَتَانَا فَزَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللَّهَ أَرْسَلَكَ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «صَدَقَ» قَالَ: فَبِالَّذِي رَفَعَ السَّمَاءَ، وَبَسَطَ الْأَرْضَ، وَنَصَبَ الْجِبَالَ، آللَّهُ أَرْسَلَكَ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ» قَالَ: فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ» قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ». قَالَ: فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا صَوْمَ شَهْرٍ فِي السَّنَةِ؟ [ص:514] فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ». قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ». قَالَ: فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا فِي أَمْوَالِنَا الزَّكَاةَ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ». قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ». قَالَ: فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا الْحَجَّ إِلَى الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ». قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ». قَالَ: فَوَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَدَعُ مِنْهُنَّ شَيْئًا، وَلَا أُجَاوِزُهُنَّ. قَالَ: ثُمَّ وَثَبَ الْأَعْرَابِيُّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ صَدَقَ الْأَعْرَابِيُّ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
تحقيق حسين سليم أسد الداراني : إسناده صحيح والحديث متفق عليه
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আগবাড়িয়ে (প্রশ্ন করা) থেকে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিলো, তখন কোনো মরুবাসী ও বুদ্ধিমান বেদুঈন এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলে তাতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হতাম। (একদিন) আমরা তাঁর নিকট বসে ছিলাম, এমতাবস্থায় তেমনি একটি ঘটনা ঘটলো। এক বেদু’ঈন এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। তারপর সে বললো: হে মুহাম্মদ, আপনার দূত আমাদের নিকট এসে দাবী করেছিলো যে, আপনার নাকি বলেন, আল্লাহ আপনাকে (রাসূল) হিসেবে পাঠিয়েছেন?
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “সে সত্যই বলেছে”। বেদুঈন লোকটি বললো: সেই সত্তার কসম, যিনি আসমানকে সুউচ্চ করেছেন এবং ভূমিকে বিস্তৃত করেছেন এবং পাহাড়সমূহকে প্রোথিত করেছেন! আল্লাহই কি আপনাকে পাঠিয়েছেন? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “হাঁ।”
সে বললো: আপনার দূত আমাদের নিকট এসে দাবী করেছিলো যে, আপনার নাকি বলেন: আমাদের উপর নাকি দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে? তখন উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সে সত্যই বলেছে।”
সে বললো: সেই সত্তার কসম (দিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি), যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এ আদেশ করেছেন? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “হাঁ।”
সে বললো: আপনার দূত আমাদের নিকট এসে দাবী করেছিলো যে, আপনার নাকি বলেন: বছরে একমাস সিয়াম পালন করা নাকি আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে? তখন উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সে সত্যই বলেছে।”
সে বললো: সেই সত্তার কসম (দিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি), যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এর আদেশ দিয়েছেন? তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “হাঁ।”
সে বললো: আপনার দূত আমাদের নিকট এসে দাবী করেছিলো যে, আপনার নাকি বলেন: আমাদের মাল-সম্পদ থেকে যাকাত দেওয়া নাকি আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে? তখন উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সে সত্যই বলেছে।”
সে বললো: সেই সত্তার কসম (দিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি), যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এর আদেশ দিয়েছেন? তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “হাঁ।”
সে বললো: আপনার দূত আমাদের নিকট এসে দাবী করেছিলো যে, আপনি নাকি বলেন: আমাদের মধ্যে থেকে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে সামর্থবানদের উপর বায়তুল্লাহ’র হাজ্জ্ব পালন করা নাকি ফরয করা হয়েছে? তখন উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সে সত্যই বলেছে।”
সে বললো: সেই সত্তার কসম (দিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি), যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এর আদেশ দিয়েছেন? তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “হাঁ।”
সে বললো: তাহলে সেই সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন! আমি এর থেকে কোনো কিছু ছেড়েও দিব না, আবার এর থেকে কোনো কিছু অতিরিক্তও করব না।” তিনি (আনাস রা:) বলেন: এরপর বেদুঈন লোকটি লাফাতে লাফাতে দৌড় দিলো। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: “বেদুঈন লোকটি যদি সত্য বলে থাকে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[1]
[1] তাহক্বীক শায়খ হুসাইন সালিম আসাদ আদ-দারানী : এর সনদ সহীহ। এটি বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত হাদীস। তাখরীজ: সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইলম ৬৩; সহীহ মুসলিম ১২; আর আমরা মুসনাদুল মাউসিলী ৩৩৩৩ নং ও সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫৪, ১৫৫ নং হাদীসের তাখরীজে এর পূর্ণাঙ্গ তাখরীজ দিয়েছি।
[৩] মু'জামুল আওসাত্ব লিত্ব-ত্বাবরানী (হাদীস নং ৫০৭০ শামেলা)
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ النَّضْرِ الْأَزْدِيُّ قَالَ: نَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ الْحَمِيدِ الْمَعْنِيُّ قَالَ: نَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيُّ قَالَ: قَالَ أَنَسٌ: لَمَّا نُهِينَا أَنْ نَبْتَدِئَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعْجِبُنَا أَنْ يَقْدُمَ الرَّجُلُ الْبَدَوِيُّ الْعَاقِلُ، فَيَسْأَلُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ عِنْدَهُ، فَبَيْنَمَا نَحْنُ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّ رَسُولَكَ أَتَانَا، فَزَعَمَ أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللَّهَ أَرْسَلَكَ، فَقَالَ: «صَدَقَ» . فَقَالَ: فَبِالَّذِي نَصَبَ الْجِبَالَ، وَرَفَعَ السَّمَاءَ، وَبَسَطَ الْأَرْضَ آللَّهُ أَرْسَلَكَ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ» . فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَكَ يَزْعُمُ أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ» . قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ» . قَالَ: فَإِنَّ رَسُولَكَ يَزْعُمُ أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا -[199]- صَوْمَ شَهْرٍ فِي السَّنَةِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ» . قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ» . قَالَ: فَإِنَّ رَسُولَكَ زَعَمَ أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا فِي أَمْوَالِنَا زَكَاةً، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ» . قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ» . قَالَ: فَإِنَّ رَسُولَكَ يَزْعُمُ أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ عَلَيْنَا الحَجُّ إلى الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا، فَقَالَ: «صَدَقَ» . قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ فَقََالََ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «نَعَمْ» . قَالَ: فَوَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَدَعُ مِنْهُنَّ شَيْئًا، وَلَا أَجُوزَهُنَّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: « إِنْ صَدَقَ الْأَعْرَابِيُّ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
لَمْ يَرْوِ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ إِلَّا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ "
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আগবাড়িয়ে (প্রশ্ন করা) থেকে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিলো, তখন কোনো মরুবাসী ও বুদ্ধিমান বেদুঈন এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলে তাতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হতাম। (একদিন) আমরা তাঁর নিকট বসে ছিলাম, এমতাবস্থায় তেমনি একটি ঘটনা ঘটলো। এক বেদু’ঈন এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। তারপর সে বললো: হে মুহাম্মদ, আপনার দূত আমাদের নিকট এসে দাবী করেছিলো যে, আপনার নাকি বলেন, আল্লাহ আপনাকে (রাসূল) হিসেবে পাঠিয়েছেন?
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “সে সত্যই বলেছে”। বেদুঈন লোকটি বললো: সেই সত্তার কসম, যিনি আসমানকে সুউচ্চ করেছেন এবং ভূমিকে বিস্তৃত করেছেন এবং পাহাড়সমূহকে প্রোথিত করেছেন! আল্লাহই কি আপনাকে পাঠিয়েছেন? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “হাঁ।”
সে বললো: আপনার দূত আমাদের নিকট এসে দাবী করেছিলো যে, আপনার নাকি বলেন: আমাদের উপর নাকি দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছে? তখন উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সে সত্যই বলেছে।”
সে বললো: সেই সত্তার কসম (দিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি), যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এ আদেশ করেছেন? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “হাঁ।”
সে বললো: আপনার দূত আমাদের নিকট এসে দাবী করেছিলো যে, আপনার নাকি বলেন: বছরে একমাস সিয়াম পালন করা নাকি আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে? তখন উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সে সত্যই বলেছে।”
সে বললো: সেই সত্তার কসম (দিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি), যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এর আদেশ দিয়েছেন? তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “হাঁ।”
সে বললো: আপনার দূত আমাদের নিকট এসে দাবী করেছিলো যে, আপনার নাকি বলেন: আমাদের মাল-সম্পদ থেকে যাকাত দেওয়া নাকি আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে? তখন উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সে সত্যই বলেছে।”
সে বললো: সেই সত্তার কসম (দিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি), যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এর আদেশ দিয়েছেন? তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “হাঁ।”
সে বললো: আপনার দূত আমাদের নিকট এসে দাবী করেছিলো যে, আপনি নাকি বলেন: আমাদের মধ্যে থেকে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে সামর্থবানদের উপর বায়তুল্লাহ’র হাজ্জ্ব পালন করা নাকি ফরয করা হয়েছে? তখন উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সে সত্যই বলেছে।”
সে বললো: সেই সত্তার কসম (দিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি), যিনি আপনাকে পাঠিয়েছেন! আল্লাহই কি আপনাকে এর আদেশ দিয়েছেন? তখন তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “হাঁ।”
সে বললো: তাহলে সেই সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন! আমি এর থেকে কোনো কিছু ছেড়েও দিব না, আবার এর থেকে কোনো কিছু অতিরিক্তও করব না।” তিনি (আনাস রা:) বলেন: এরপর বেদুঈন লোকটি লাফাতে লাফাতে দৌড় দিলো। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: “বেদুঈন লোকটি যদি সত্য বলে থাকে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
[৪] মুতাক্বাদ্দিমিনদের বক্তব্য থেকে সমতল পৃথিবীর দলীলসমূহ
[১] ইমাম মুকাতিল ইবনে সুলায়মান (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১৫০ হিজরী]
তিনি তাঁর তাফসীর গ্রন্থে আল্লাহ তায়ালার এই আয়াত:
{وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ}
– এর ব্যাখ্যায় বলেন:
يعني بسط الأرض من تحت الكعبة فبسطها بعد الكعبة بقدر ألفى سنة [187 أ] فجعل طولها مسيرة «2» خمسمائة عام وعرضها مسيرة خمسمائة عام
❝এর অর্থ হলো, আল্লাহ তা'আলা কাবার নিচ থেকে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। তিনি কাবা প্রতিষ্ঠার পর দুই হাজার বছর ধরে পৃথিবীকে প্রসারিত করেছেন। ফলে পৃথিবীর দৈর্ঘ্য হয়েছে ৫০০ বছরের পথ পরিমাণ এবং প্রস্থও ৫০০ বছরের পথ পরিমাণ।❞
[المصدر : تفسير مقاتل بن سليمان - ج 2 - ص 366]
তিনি একই তাফসীর গ্রন্থে সূরা আল-গাশিয়াহ (৮৮:২০) আয়াত:
{وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ}
– এর ব্যাখ্যায় বলেন:
يعني كيف بسطت من تحت الكعبة مسيرة خمسمائة عام
❝অর্থাৎ, কিভাবে কাবার নিচ থেকে পৃথিবীকে ৫০০ বছরের পথ পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে।❞
[المصدر : تفسير مقاتل بن سليمان - ج 4 - ص 679]
তিনি তাঁর তাফসীরে, আয়াত والأرض مددناها–এর ব্যাখ্যায় বলেন:
يعنى بسطناها يعنى مسيرة خمسمائة عام طولها وعرضها وغلظها مثله فبسطها من تحت الكعبة
❝এর অর্থ হলো, আমরা পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি - অর্থাৎ এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্ব প্রতিটিতে পাঁচশ বছরের পথ পরিমাণ। সুতরাং আল্লাহ তা কাবার নিচ থেকে এভাবে বিস্তৃত করেছেন।❞
«تفسير مقاتل بن سليمان» (2/ 426)
[২] ইমাম আবু বাকর আল-আসাম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ২২৫ হিজরী]
তিনি তার তাফসিরে আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ
এর ব্যাখ্যায় বলেন,
المد هو البسط إلى ما لا يدرك منتهاة .
"পৃথিবীর (সমতলে) বিস্তার এমনভাবে হয়েছে যে এর শেষ সীমা জানা সম্ভব নয়।"
تفسير أبي بكر الأصم [82]
[৩] আবু আলী আল-জুব্বাঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৩০৩ হিজরী]
তিনি তার তাফসীরে আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
الَّذِیْ جَعَلَ لَکُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّ السَّمَآءَ بِنَآءً ۪ وَّ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرٰتِ رِزْقًا لَّکُمْ ۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّ اَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
এর ব্যাখ্যায় বলেন,
واستدل أبو علي الجبائي بهذه الآية على أن الأرض بسيطة ليست كرة كما يقول المنجمون والبلخي بأن قال: جعلها فراشاً والفراش البساط بسط الله تعالى أباها والكرة لا تكون مبسوطة
"আবু আলী আল-জুব্বাঈ এই আয়াত দ্বারা দলিল দিয়েছেন যে, পৃথিবী সমতল, জ্যোতিষবিদ ও আল-বালখীর মত গোলাক আকৃতির নয়। তাঁর যুক্তি: আল্লাহ পৃথিবীকে 'ফিরাশ' (বিছানা) বলেছেন, আর বিছানা হলো সমতল আসন। আল্লাহ তাআলা একে সমতল করেছেন, আর গোলাকার বস্তু কখনো সম্পূর্ণ সমতল হতে পারে না।"
تفسير أبي علي الجبائي [68]
[৪] ইমাম ইবনে জারীর আত-তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) [২২৪-৩১০ হিজরী]
ইমাম তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) কুরআনের ১৩ নং সূরার ৩ নং আয়াতের 'আর তিনিই পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছেন বা সম্প্রসারিত করেছেন'
এর তাফসীরে উল্লেখ করেছেনঃ
وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ
"আল্লাহ তা'আলা পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করেছেন"
এর অর্থ হলো,
فبَسَطَها طولًا وعرضًا.
"তিনি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের দিক থেকে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন।"
[তাফসীরে তাবারী ১৩/৪১৩]
فسير الطبري [13/413]
*তথ্যসূত্র - https://shamela.ws/book/7798/9131
[৫] ইমাম ইবনে মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) [২৪৫-৩২৪ হিজরী]
ইমাম ইবনে মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) কুরআনের সূরা নূহ এর ১৯ নং আয়াতের তাফসীরে বলেন,
لو كانت الأرض كروية لما استقر الماء عليها.
"পৃথিবী যদি বলের মতো (গোলাকার) হতো, তবে ভূপৃষ্ঠে কোনো পানি থাকতো না।"
তাফসীরে ইবনে আত্বিয়্যাহ [৫/৩৭৫]
تفسير ابن عطية - [5/375]
*তথ্যসূত্র - https://shamela.ws/book/23632/2622#p1
[৬] ইমাম সামারকান্দী (রাহিমাহুল্লাহ) [৩৭৩ হিজরী]
ইমাম সামারকান্দী (রাহিমাহুল্লাহ)
তার তাফসীরে সামারকান্দী-তে ৩য় খন্ড ৩৩৩ নং পৃষ্ঠায়,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
«وَالْأَرْضَ مَدَدْناها»
এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
يعني: بسطناها مسير خمسمائة عام من تحت الكعبة،
অর্থাৎ "আমরা তা বিস্তৃত করেছি কাবা'র নীচ থেকে পাঁচশত বছরের পথের দূরত্বে।"
«تفسير السمرقندي = بحر العلوم» (3/ 333)
তাফসীরে সামারকান্দী-তে ৩য় খন্ড ৩৪৭ নং পৃষ্ঠায়,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
«وَالْأَرْضَ فَرَشْناها»
এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
يعني: وفي الأرض آية، بسطناها مسيرة خمسمائة عام من تحت الكعبة
অর্থাৎ "এবং পৃথিবীতে একটি নিদর্শন রয়েছে, আমরা তা বিস্তৃত করেছি কাবা'র নীচ থেকে পাঁচশ বছরের পথের দূরত্বে।"
«تفسير السمرقندي = بحر العلوم» (3/ 347)
[৭] মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ আল-মালাতী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৩৭৭ হিজরী]
তার আক্বীদার কিতাবে বলেন,
{وَالْأَرْض بعد ذَلِك دحاها} يَعْنِي بعد خلق السَّمَوَات {دحاها} يَعْنِي بسطها من تَحت الْكَعْبَة
"{এবং এরপর পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন} অর্থাৎ, আকাশসমূহ সৃষ্টির পর; {দাহা'হা} - অর্থাৎ আল্লাহ পৃথিবীকে কাবার নীচ থেকে সমতলে বিস্তৃত করেছেন।"
«التنبيه والرد على أهل الأهواء والبدع» (ص71)
[৮] ইমাম কাহতানী আল আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃত্যু ৩৮৭ হিজরী)
ইমাম কাহতানী আল আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ)
তার বিখ্যাত কবিতা "নুনিয়্যাতুল কাহতানী" ( نونية القحطاني ) এর ৩২-৩৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,
كذب المهندس والمنجم مثله
فهما لعلم الله مدعيان
الأرض عند كليهما كروية
وهما بهذا القول مقترنان
والأرض عند أولي النهى لسطيحة
بدليل صدق واضح القرآن
والله صيرها فراشا للورى
وبنى السماء بأحسن البنيان
والله أخبر أنها مسطوحة
وأبان ذلك أيما تبيان
"মিথ্যে বলেছে জ্যোতির্বিদ ও জ্যামিতিবিদ,
তারা তো আল্লাহর গায়েবি ইলমের দাবিদার,
তাদের উভয়ের একই উক্তি- পৃথিবী গোলাকার।
এই কথায় তারা উভয়ই সমান।
আর বিচক্ষণ লোকদের নিকট পৃথিবী সমতল
কুরআনের নির্ভুল ও স্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত ।
সৃষ্টিকুলের জন্য আল্লাহ পৃথিবীকে বিছানা স্বরূপ বানিয়েছেন।
সর্বোত্তম গঠনে বানিয়েছেন আসমান।
আল্লাহ জানিয়ে দিলেন- পৃথিবী সমতল।
এবং তিনি তা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন।
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/7533/16
[৯] আবু হাইয়ান আল-আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ) [৩১০-৪১৪ হিজরী]
আবু হাইয়ান আল-আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ) সূরা নূহ এর ১৯ নং আয়াত
وَ اللّٰهُ جَعَلَ لَكُمُ الۡاَرۡضَ بِسَاطًا
এর "بِسَاطًا" শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে বলেছেনঃ
وَظَاهِرُهُ أَنَّ الْأَرْضَ لَيْسَتْ كُرَوِيَّةً بَلْ هِيَ مَبْسُوطَةٌ
"যাহের অর্থ হল পৃথিবী গোলাকার নয়, বরং সমতল।"
البحر المحيط في التفسير (10/ 284)
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/23591/5915
[১০] ইমাম আব্দুল কাহির আল-বাগদাদি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৪২৯ হিজরী]
ইমাম আব্দুল কাহির আল-বাগদাদি (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর উসূল আদ-দীন (أصول الدين) কিতাবের ১২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বলেন:
والباسط فى الدلالة على بسط الرزق لمن شاء وعلى انه بسط الأرض ولذلك سماها بساطاً خلاف قول من زعم من الفلاسفة والمنجمين ان الارض كرية غير مبسوطة .
❝"আল-বাসিত" الْبَاسِطُ (আল্লাহর নামসমূহের একটি) শব্দটি এই অর্থে ব্যবহৃত হয় যে, তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক বিস্তৃত করেন এবং তিনিই পৃথিবীকে সমতল করে বিছিয়েছেন। এজন্যই তিনি পৃথিবীকে 'বিসাত' (সমতল বিছানা) নামে ডেকেছেন। এটি সেই দর্শনবিদ ও জ্যোতির্বিদদের বক্তব্যের বিপরীত, যারা মনে করে যে পৃথিবী গোলাক আকৃতির এবং সমতল নয়।❞
[المصدر : أصول الدين لعبد القاهر البغدادي - ص 124]
তথ্যসূত্রঃ https://archive.org/details/osooluldeen/page/n124/mode/1up
[১১] ইমাম মাক্কী ইবনু আবি তালিব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৪৩৭ হিজরী]
তিনি তাঁর তাফসীরগ্রন্থ الهداية إلى بلوغ النهاية–তে আল্লাহ তায়ালার নিম্নোক্ত আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় লিখেছেন:
১. আল্লাহ তায়ালা বলেন:
{وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا} — “এবং আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি।” (সূরা ক্বাফ: ৭)
أي: وينظرون إلى الأرض كيف مددنا مسطحة لا اعوجاج فيها.
❝অর্থাৎ, তারা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুক, কিভাবে আমি একে বিস্তৃত করেছি— একটি সমতল ভূমির মতো, যাতে কোনো বক্রতা নেই।❞
[المصدر : الهداية إلى بلوغ النهاية - ج ١١ - ص ٧٠٣١]
২. সূরা আল-গাশিয়াহ: ২০–এর আয়াত:
{وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ}
“এবং পৃথিবীর প্রতি তাকিয়ে দেখ, কিভাবে তা সমতল করা হয়েছে।”
أي بسطها فجعلها مستوية وطيئة ليتصرف عليها الخلق ولا يمتنعون من أسفارهم.
❝অর্থাৎ, আল্লাহ্ তায়ালা পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং একে সমতল ও সমান করেছেন, যাতে সৃষ্টিজীব (মানুষ) তার উপর চলাফেরা করতে পারে এবং তাদের যাত্রা বাধাগ্রস্ত না হয়।❞
[المصدر : الهداية إلى بلوغ النهاية - ج ١٢ - ص ٨٢٢٧]
{فَسَوَّاهَا}
“তিনি তাকে সমান করলেন” — এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন:
أي: جعلها مستوية لا شيء منها أرفع من شيء ولا شيء منها أخفض من شيء.
❝তিনি একে সমানভাবে সমতল করেছেন, যাতে এর কোনো অংশ অন্য অংশের চেয়ে উঁচু না হয় এবং কোনো অংশ নিচু না হয়।❞
«الهداية الى بلوغ النهاية» (12/ 8040)
[১২] ইমাম আল-মাওয়ার্দী (রাহিমাহুল্লাহ) [৩৬৪-৪৫০ হিজরী]
ইমাম আল-মাওয়ার্দী (রাহিমাহুল্লাহ) তার তাফসীরে মারওয়ার্দীতে লিখেছেন,
আল্লাহ বলেছেনঃ
وهو الذي مد الأرض
"এবং তিনিই পৃথিবীকে প্রসারিত করেছেন, (১৩:০৩)
أي بسطها للاستقرار عليها , رداً على من زعم أنها مستديرة كالكرة.
যার অর্থ হল তিনি এটিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন, যাতে মানুষ এতে স্থিরভাবে বসবাস করতে পারে। এটি তাদের খন্ডন করে যারা দাবি করে যে এটি একটি বলের মতো গোলাকার।"
তাফসীরে মাওয়ার্দী [৩/৯২]
[المصدر : تفسير الماوردي = النكت والعيون - ج 3 - ص 92 ]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/8346/1744#p1
[১৩] ইমাম আল-কুশাইরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৪৬৫ হিজরী]
তিনি তাঁর আত-তাইসীর ফি ইলমিত তাফসির কিতাবের ৪৬২ নম্বর পৃষ্ঠায়, সূরা আল-বাকারাহ-এর আয়াত:
{وَالسَّمَاءَ بِنَاءً}
– এর ব্যাখ্যায় বলেন:
وفي الآية دليل على أن الأرض مبسوطة وليست على هيئة الكرة.
❝এই আয়াতে প্রমাণ রয়েছে যে, পৃথিবী সমতল এবং এটি গোলক আকৃতির নয়।❞
[المصدر : التيسير في علم التفسير - ص 462]
তথ্যসূত্রঃ https://archive.org/details/0620Pdf_201804/page/n460/mode/1up
[১৪] ইমাম আবুল মুযাফফার আস সাম'আনী (রাহিমাহুল্লাহ) [৪৮৯ হিজরী]
তার তাফসীরে সাম'আনী-এর ৩য় খন্ড ১৩৩ নং পৃষ্ঠায়,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
{وَالْأَرْض مددناها}
এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
مَعْنَاهُ: بسطناها، وَيُقَال: إِنَّهَا مسيرَة خَمْسمِائَة سنة فِي مثلهَا، دحيت من تَحت الْكَعْبَة.
"অর্থাৎ আমরা পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং বর্ণিত আছে যে, একে কাবা'র নীচ থেকে ৫০০ বছরের পথব্যাপী (দৈর্ঘ্যে) বিস্তৃত করেছি, (প্রস্থের) দিক থেকেও অনুরুপ।"
«تفسير السمعاني» (3/ 133)
[১৫] ইমাম আর-রাগীব ইসফাহানী (রাহিমাহুল্লাহ) [৫০২ হিজরী]
তার তাফসীরের ১ম খন্ড ২৩৮ নং পৃষ্ঠায়,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
{وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ إِلَّا أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ}
এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
وأم القرى لمكة وذلك لنحو ما روى أنه لا خلق الأرض دحاها من تحت الكعبة
"এবং মক্কাকে 'উম্মুল কুরা' (নগরীদের মাতৃস্থান) বলা হয়। এটা সেই বর্ণনার আলোকে, যেখানে বলা হয়েছে যে পৃথিবীর সৃষ্টি শুরু হয়েছিল কাবার নিচ থেকে বিস্তার লাভের মাধ্যমে।"
«تفسير الراغب الأصفهاني» (1/ 238)
[১৬] ইমাম বুরহান উদ্দিন আল-কিরমানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৫০৫ হিজরী]
ইমাম বুরহান উদ্দিন আল-কিরমানী (রাহিমাহুল্লাহ) লিখেছেন,
وقوله: (وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا) .
أي بسطناها، وهذا دليل على أن الأرض مبسوطة وليست على شكل
الكرة.
الغريب: المد التطويل، والمدور والكرة لها عرض وطول وعمق.
قوله: (وَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ (7)
يعني النبات.
আর আল্লাহর বাণী:
وقوله: (وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا)
“আর পৃথিবীকে আমরা বিস্তৃত করে দিয়েছি।”
এর মানে: “আমরা একে বিছিয়ে দিয়েছি। এটি প্রমাণ করে যে পৃথিবী সমতল/বিস্তৃত এবং এটি গোলাক আকৃতির নয়।“
আলোচ্য শব্দের ব্যতিক্রম অর্থ: “মাদ” অর্থ দীর্ঘ করা বা প্রসারিত করা। আর গোলক বা বল আকৃতির বস্তুতে থাকে প্রস্থ, দৈর্ঘ্য ও গভীরতা।
«غرائب التفسير وعجائب التأويل» - (2/ 1129)
*তথ্যসূত্র - https://shamela.ws/book/12820/1022
উক্ত কিতাবের ১ম খণ্ড, ১২৫ নম্বর পৃষ্ঠায়
আল্লাহ তায়ালার এই আয়াতের ব্যাখ্যায়:
{الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً}
– তিনি বলেন:
الفَرش: البَسط، والفراش: المبسوط للتوطئة.
❝ফারশ মানে বিস্তৃত করা, আর ফিরাশ মানে: বিস্তৃত বিছানা বা এমন কিছু যা পাতা হয় বসার বা শোয়ার জন্য।❞
ابن عباس: الفراش المنام، أي مناماً للخلق، والبناء: الوضع على الأساس.
❝ইবন আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: ফিরাশ মানে ঘুমের স্থান, অর্থাৎ মানুষের জন্য ঘুমানোর জায়গা। আর বিনাআ মানে ভিত্তির উপর স্থাপন করা।❞
الزجاج: ما علا الأرض بناء.
❝জাজ্জাজ বলেন: যা ভূমির উপর উঁচু করে নির্মিত হয়।❞
استدل أكثر المفسرين على أن شكل الأرض بسيط.
❝বেশিরভাগ মুফাসসিরগণ পৃথিবীর আকার সমতল বলে প্রমাণিত করেছেন।❞
[المصدر : «غرائب التفسير وعجائب التأويل» - ج 1 - ص 125]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/12820/39
কিতাবের ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১২৯-এ বলা হয়েছে:
{وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا}
“তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন।”
أي بسطناها، وهذا دليل على أن الأرض مبسوطة وليست على شكل الكرة.
❝অর্থাৎ, আমরা পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি। আর এটিই প্রমাণ করে যে, পৃথিবী সমতল, গোলাকার আকারের নয়।❞
[১৭] ইমাম বাগাওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) [৫১০ হিজরী]
ইমাম বাগাওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ)
তার তাফসীরে বাগাওয়ী-তে ৩য় খন্ড ৫৪ নং পৃষ্ঠায়,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
«وَالْأَرْضَ مَدَدْناها،»
এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
بَسَطْنَاهَا عَلَى وَجْهِ الْمَاءِ، يُقَالُ: إِنَّهَا مسيرة خمسمائة عام فِي مِثْلِهَا دُحِيَتْ مِنْ تَحْتِ الْكَعْبَةِ.
অর্থাৎ "আমরা একে (যমীন) পানির ওপর বিস্তৃত করেছি। বলা হয় যে, তা পাঁচশ বছরের পথের সমপরিমাণ। এভাবে কাবার নীচ থেকে এটিকে বিছানো হয়েছে।"
«تفسير البغوي - إحياء التراث» (3/ 54)
[১৮] ইমাম আব্দুল হক্ব (ইবনু আত্বিয়্যাহ) (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৫৪২ হিজরী]
ইমাম আব্দুল হক্ব (ইবনু আত্বিয়্যাহ) আল আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
"وظاهر هذه الآية أن الأرض سطح لا كرة، وهو الذي عليه أهل العلم، والقول بكريتها وإن كان لا ينقص ركناً من أركان الشرع، فهو قول لا يثبته علماء الشرع."
"“এই আয়াতের প্রকাশ্য অর্থ হলো—পৃথিবী সমতল, গোলক নয়। এবং এটাই আলেমদের (আহলুল ইলমের) অভিমত। আর পৃথিবীকে গোলক বলা, যদিও তা শরীয়তের কোনো স্তম্ভকে ভঙ্গ করে না, তবুও এটি এমন একটি মত যা শরিয়তের আলেমদের দ্বারা প্রমাণিত নয়।" "
📘| تفسير ابن عطية - [5/475]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/23632/2722#p1
[৫] মুতাআখখিরিনদের বক্তব্য থেকে সমতল পৃথিবীর দলীলসমূহ
[১] ইমাম ফাখরুদ্দিন আর-রাযী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৬০৬ হিজরী]
তিনি তাঁর বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ মাফাতিহুল গাইব / আত-তাফসীরুল কাবীর-এর
১৯ তম খণ্ডে পৃষ্ঠা নং ৫-এ তিনি বলেন:
وَقَالَ آخَرُونَ: كَانَتْ مُجْتَمِعَةً عِنْدَ الْبَيْتِ الْمُقَدَّسِ فَقَالَ لَهَا: اذْهَبِي كَذَا وَكَذَا.
اعْلَمْ أَنَّ هَذَا الْقَوْلَ إِنَّمَا يَتِمُّ إِذَا قُلْنَا الْأَرْضُ مُسَطَّحَةٌ لَا كُرَةٌ وَأَصْحَابُ هَذَا الْقَوْلِ احْتَجُّوا عَلَيْهِ.
❝অন্যদের মতে, পৃথিবী প্রথমে বাইতুল মাকদিসের আশেপাশে সংক্ষিপ্ত ছিল, পরে আল্লাহ তা'আলা একে প্রসারিত করেছেন। এরপর তিনি বলেন: এই মত কেবল তখনই গ্রহণযোগ্য, যখন বলা হয় যে পৃথিবী সমতল, গোলক নয়।❞
[المصدر: مفاتيح الغيب - ج ١٩ - ص ٥]
১৯ তম খণ্ডের ১৩০ নম্বর পৃষ্ঠায়, আল্লাহর বাণী:
{وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا}
“এবং আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি।” — সূরা ক্বাফ: ৭
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: بَسَطْنَاهَا عَلَى وَجْهِ الْمَاءِ
❝ইবন আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: আমরা একে পানির উপর সমতলভাবে বিস্তৃত করেছি।❞
[المصدر: مفاتيح الغيب - ج ١٩ - ص ١٣٠]
[২] ইমাম আব্দুল কারীম আর-রাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৬২৩ হিজরী]
তিনি তাঁর আল-আযীয শারহুল ওয়াজীয (الشرح الكبير للرافعي) কিতাবে বলেছেন:
والثاني: يجب، وهو اختيار القاضي أبِي الطَّيِّبِ، ويروى عن أحمد؛ لأن الأرض مسطحة، فإذا رؤي في بعض البلاد عرفنا أن المانع في غيرِه شَيْءٌ عَارِض؛ لأن الهِلَالَ ليس بِمِحَلِّ الرُّؤْيَةِ.
❝দ্বিতীয় মত: এটি ক্বাযী আবু তাইয়্যিব (রহ.)-এর পছন্দনীয় মত এবং এটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) থেকেও বর্ণিত হয়েছে। কারণ, পৃথিবী সমতল। তাই যদি কোনো স্থানে চাঁদ দেখা যায়, তবে অন্য স্থানে না দেখা গেলে বুঝতে হবে যে সেখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, কারণ চাঁদ সবার দৃষ্টিগোচর হয় না।❞
[المصدر : العزيز شرح الوجيز = الشرح الكبير للرافعي - ج ٣ - ص ١٨٠]
[৩] ইমাম মুহাম্মাদ আল কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৬৭১ হিজরী]
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আল কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
فِي هَذِهِ الْآيَةِ رَدٌّ عَلَى مَنْ زَعَمَ أَنَّ الْأَرْضَ كَالْكُرَةِ، وَرَدٌّ عَلَى مَنْ زَعَمَ أَنَّ الْأَرْضَ تَهْوِي أَبْوَابُهَا عَلَيْهَا، وَزَعَمَ ابْنُ الرَّاوَنْدِيِّ أَنَّ تَحْتَ الْأَرْضِ جِسْمًا صَعَّادًا كَالرِّيحِ الصَّعَّادَةِ، وَهِيَ مُنْحَدِرَةٌ فَاعْتَدَلَ الْهَاوِي وَالصَّعَّادِي فِي الْجِرْمِ وَالْقُوَّةِ فَتَوَافَقَا. وَزَعَمَ آخَرُونَ أَنَّ الْأَرْضَ مُرَكَّبٌ مِنْ جِسْمَيْنِ، أَحَدُهُمَا مُنْحَدِرٌ، وَالْآخَرُ مُصْعِدٌ، فَاعْتَدَلَا، فَلِذَلِكَ وَقَفَتْ. وَالَّذِي عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ وَأَهْلُ الْكِتَابِ الْقَوْلُ بِوُقُوفِ الْأَرْضِ وَسُكُونِهَا وَمَدِّهَا، وَأَنَّ حَرَكَتَهَا إِنَّمَا تَكُونُ فِي الْعَادَةِ بِزَلْزَلَةٍ تُصِيبُهَا
"এই আয়াতে তাদের মত খণ্ডন করা হয়েছে যারা দাবি করে যে পৃথিবী গোলকের মতো, এবং তাদের মতও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে যারা বলে যে পৃথিবী নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে। ইবনে রাওয়ান্দী দাবি করেছিলেন যে পৃথিবীর নিচে একটি ঊর্ধ্বগামী বস্তু আছে, যেমন ঊর্ধ্বমুখী বাতাস, আর পৃথিবী নিম্নগামী; ফলে নিচের দিকে পড়া ও উপরের দিকে উঠা—দুই শক্তি ভারসাম্য রেখেছে। অন্যদের ধারণা যে পৃথিবী দুটি বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত—একটি নিম্নগামী, অন্যটি ঊর্ধ্বগামী—এবং তারা সমতায় পৌঁছেছে, তাই পৃথিবী স্থির রয়েছে। মুসলিম ও আহলে কিতাবদের মতে সঠিক মত হলো—পৃথিবী স্থির, অচল ও সমতল, এবং এটি সাধারণত কেবল ভূমিকম্পের সময়ই নড়ে উঠে।"
📘| كتاب تفسير القرطبي - [9/280]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/20855/3611
[৪] ইমাম আল-বাইযাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [৬৮৫ হিজরী]
তিনি তাঁর বিখ্যাত তাফসীর (তাফসীর আল-বাইদাওয়ী)-এর ৩য় খণ্ড, ১৮১ পৃষ্ঠায়, আল্লাহ তায়ালার বাণী:
{وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ}
“আর তিনিই সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা।”
بسطها طولاً وعرضاً لتثبت عليها الأقدام وينقلب عليها الحيوان. جبالاً ثوابت من رسا الشيء إذا ثبت، جمع راسية والتاء للتأنيث على أنها صفة أجبل أو للمبالغة.
❝তিনি পৃথিবীকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বিস্তৃত করেছেন, যাতে মানুষের পা তাতে স্থিরভাবে দাঁড়াতে পারে এবং প্রাণীরা তাতে চলাচল করতে পারে। আর তিনি তাতে স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা। ‘রাওয়াসী’ শব্দটি এসেছে ‘রাসা’ (স্থির থাকা) শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো স্থির বা দৃঢ় কোনো কিছু। এটি 'রাসিয়া' এর বহুবচন এবং এখানে 'তাআ' এসেছে স্ত্রীলিঙ্গ বোঝাতে অথবা গুরুত্ব বোঝাতে।❞
[المصدر: تفسير البيضاوي = أنوار التنزيل وأسرار التأويل - ج ٣ - ص ١٨١]
[৫] ইমাম আন-নাসাফি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৭১০ হিজরী]
তিনি তাঁর তাফসীরের কিতাব “মাদারিক আত-তানযীল ওয়া হাকায়িক আত-তাওয়ীল”-এ আল্লাহ তায়ালার এই বাণীর
{وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ}
“এবং পৃথিবীর প্রতি তাকাও— কিভাবে তা সমতল করা হয়েছে।” (সূরা আল-গাশিয়াহ ৮৮:২০)
ব্যাখ্যায় বলেন:
سطحاً بتمهيد وتوطئة فهي كلها بساط واحد تنبسط من الأفق إلى الأفق، فكذا الزرابي.
❝এটি সমতলভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং বসবাসযোগ্য করে তোলা হয়েছে। ফলে পুরো পৃথিবী একটি বিছানার মতো, যা এক দিগন্ত থেকে অন্য দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। ঠিক যেমন কার্পেট বিছানো হয়।❞
[المصدر : تفسير النسفي = مدارك التنزيل وحقائق التأويل - ج ٣ - ص ٦٣٥]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/1394/7534
[৬] ইমাম ইবনুল আহনাফ আল ইয়ামানী (রাহিমাহুল্লাহ) [৭১৭ হিজরী]
ইমাম ইবনুল আহনাফ আল ইয়ামানী (রাহিমাহুল্লাহ)
তার তাফসীরে ৪র্থ খন্ড ৮৯ নং পৃষ্ঠায়,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
{وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ بِسَاطًا (19)}
এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
مِهادًا تَحْمِلُكُمْ أحْياءً وتَسْتُرُكُمْ أمْواتًا، والمعنى: أنه تعالى بَسَطَها لِخَلْقِهِ، فجعلها ذَلُولًا وفِراشًا لَهُمْ، قيل: إنها بُسِطَتْ مِنْ تَحْتِ الكَعْبةِ مسيرة خمسمائة عام؛
"একটি শয্যা যা তোমাদের জীবিত অবস্থায় বহন করে এবং মৃত অবস্থায় আচ্ছাদিত করে।" এর অর্থ হলো— আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির জন্য পৃথিবীকে প্রশস্ত করেছেন, তাদের জন্যে তিনি একে করেছেন অনুগত ও শয্যাস্বরূপ। বলা হয় যে, এটি কাবা'র নিচ থেকে ৫০০ বছরের দূরত্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে।
«البستان في إعراب مشكلات القرآن» (4/ 89)
[৭] ইমাম আলাউদ্দিন আলী আল খাযিন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৭৪১ হিজরী]
ইমাম আলাউদ্দিন আলী বিন মুহাম্মাদ আল খাযিন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
«فقال: وهو الذي مد الأرض أي بسطها على وجه الماء، وقيل: كانت الأرض مجتمعة فمدها من تحت البيت الحرام، وهذا القول إنما يصح إذا قيل إن الأرض منسطحة كالأكف، وعند أصحاب الهيئة: الأرض كرة، ويمكن أن يقال: إن الكرة إذا كانت كبيرة عظيمة فكل قطعة منها تشاهد ممدودة كالسطح الكبير العظيم، فحصل الجمع ومع ذلك فالله تعالى قد أخبر أنه مد الأرض، وأنه دحاها وبسطها وكل ذلك يدل على التسطيح والله تعالى أصدق قيلا وأبين دليلا من أصحاب الهيئة وجعل فيها»
তিনি বলেছেন, "এবং তিনিই পৃথিবীকে প্রসারিত করেছেন," (وهو الذي مد الأرض) অর্থাৎ তিনি পানির ওপর পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। আরও বলা হয়েছে, পৃথিবী একত্রিত ছিল, অতঃপর তিনি তা কাবা ঘরের নিচ থেকে প্রসারিত করেছেন। এই বক্তব্য তখনই সঠিক হবে যদি ধরে নেওয়া হয় যে পৃথিবী হাতের তালুর মতো সমতল। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী গোলাকার। তবে এও বলা যায় যে, যদি পৃথিবী অত্যন্ত বিশাল গোলক হয়, তবে এর প্রতিটি অংশই বিশাল সমতল ভূমির মতো দেখায়। এভাবে উভয় মতের মধ্যে সমন্বয় সম্ভব। তবুও আল্লাহ তা'আলা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে তিনি পৃথিবীকে প্রসারিত করেছেন, বিস্তৃত করেছেন (دحاها) এবং সমতল করেছেন (وبسطها)। এসব বর্ণনা সমতল আকৃতিরই ইঙ্গিত দেয়। আর আল্লাহ তা'আলার বাণী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতামতের চেয়ে অধিক সত্য ও প্রমাণে অধিক স্পষ্ট।
تفسير الخازن لباب التأويل في معاني التنزيل - [3/4]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/23628/1014#p1
[৮] ইমাম আবী হাইয়ান মুহাম্মাদ ইবনে ইউসূফ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৭৪৫ হিজরী]
ইমাম আবী হাইয়ান মুহাম্মাদ ইবনে ইউসূফ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
وَظَاهِرُهُ أَنَّ الْأَرْضَ لَيْسَتْ كُرَوِيَّةً بَلْ هِيَ مَبْسُوطَةٌ،
"এবং এর বাহ্যিক অর্থ হলো যে পৃথিবী গোলাকার নয়, বরং এটি সমতল।"
📘| كتاب البحر المحيط في التفسير – [10/284]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/23591/5915
[৯] ইমাম শামছুদ্দিন আয যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৭৪৮ হিজরী]
তিনি তার আক্বীদার কিতাবে বলেন,
فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ أَمَّا قَوْلُهُ
{أَمِ السَّمَاءُ بناها - رفع سمكها فسواها}
الآيَاتُ فَإِنَّهُ خَلَقَ الأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ قبل خلق السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ فِي يَوْمَيْنِ آخَرَيْنِ ثُمَّ نَزَلَ إِلَى الأَرْضِ فَدَحَاهَا قَالَ وَدَحْيُهَا أَنْ أَخْرَجَ مِنْهَا الْمَاءَ وَالْمَرْعَى)
ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন:
"{أَمِ السَّمَاءُ بناها} (৭৯:২৭) "তিনি এর উচ্চতা বৃদ্ধি করেছেন এবং এটিকে সুবিন্যস্ত করেছেন।" অর্থাৎ - আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুই দিনে আকাশ সৃষ্টির আগে। তারপর তিনি আকাশের দিকে ইচ্ছা করে তাকে দুই দিনে সুবিন্যস্ত করেছেন। এরপর তিনি পৃথিবীতে নাযিল হয়ে তাকে সমতলে বিস্তৃত করেছেন।" তিনি বলেন: "এর দাহা অর্থ হলো তিনি তা থেকে পানি ও চারণভূমি বের করেছেন।"
«العلو للعلي الغفار» (ص56)
[১০] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম আল জাউযিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [৬৯১-৭৫১ হিজরী]
তিনি তার "আর-রূহ" কিতাবে বলেন,
وكذلك مجيئه إلى الأرض حين دحاها، وسوَّاها، ومدَّها، وبسطها، وهيَّأها لما يرادُ منها.
"এবং অনুরূপভাবে তিনি (আল্লাহ তায়ালা) পৃথিবীতে (নাযিল হয়ে) এসেছিলেন যখন তিনি তাকে সমতলে বিস্তৃত করেছিলেন, সুবিন্যস্ত করেছিলেন, প্রসারিত করেছিলেন এবং প্রশস্ত করেছিলেন, এবং তাকে তার নির্ধারিত উদ্দেশ্যের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন।"
«الروح - ابن القيم» (1/ 309 ط عطاءات العلم)
[১১] ইমাম আস-সামিন হালাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [৭৫৬ হিজরী]
ইমাম আস-সামিন হালাবী (রাহিমাহুল্লাহ)
তাঁর 'উমদাতুল হুফফায' কিতাবের ২য় খন্ড ১৯৭ পৃষ্ঠায় বলেছেন,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
{وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ}
"পৃথিবীকে কীভাবে সমতল করেছেন?" (৮৮:২০)
أي بسطت واتسعت،
এর মানে হলো পৃথিবীকে বিস্তৃত এবং সমতল করা হয়েছে,
যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
{وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَاهَا}
"এবং এরপর পৃথিবীকে সমতল করেছেন"
أي بسطها بعد أن كانت كرةً.
- যদিও এটি পূর্বে গোলক আকৃতির ছিল।
«عمدة الحفاظ في تفسير أشرف الألفاظ» (2/ 197)
[১২] ইমাম আদুদুদ্দিন আল-ইযী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৭৫৬ হিজরী]
তিনি তাঁর কিতাব আল-মাওয়াকিফ ফি ইলমুল কালাম-এর ১৯৯ নম্বর পৃষ্ঠায় বলেন:
الأرض بسيطة وليست كرية، وقولهم : تضاريس الأرض وخشوناتها ولا قدر لها، بالنسبة إليها، فهى كجاورسة على كرة كبيرة، فلا تخرجها عن كونها كرية بجملتها، لا يغني ، إذ الكرية لا تقبل الأشد والأضعف .
❝পৃথিবী সমতল, গোলাকার নয়। আর যারা বলে যে পৃথিবীর পার্বত্য এলাকা ও অমসৃণ অংশগুলো খুবই নগণ্য — বিশাল একটি গোলকের উপর ক্ষুদ্র দানার মতো — এটা কোনো গ্রহণযোগ্য কথা নয়। কারণ, গোলক আকৃতিতে 'কোথাও বেশি কোথাও কম' — এই ধারণা প্রযোজ্য নয়।❞
[المصدر: المواقف في علم الكلام - ص ١٩٩]
[১৩] ইমাম ইবনুল মুলাক্বিন (রাহিমাহুল্লাহ) [৭২৩–৮০৪ হিজরী]
ইবনুল মুলাক্বিন (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন একজন মিশরী আলেম, হাদীসবিশারদ ও বহুগ্রন্থ প্রণেতা যিনি হাদীস, ফিকহ ও তাফসীরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি বলেনঃ
والثاني: يجب؛ لأن الهلال واحد والخطاب شامل، ولأن الأرضَ مُسَطحَة.
আর দ্বিতীয় মত হলো: তা অবশ্যই ওয়াজিব, কারণ চাঁদ (হিলাল) তো একটাই এবং নির্দেশ (সারা দুনিয়ার জন্য) সর্বজনীন। আর এজন্যও যে, পৃথিবী সমতল।
📘| كتاب عجالة المحتاج إلى توجيه المنهاج - [2/521]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/20561/516
[১৪] ইমাম আল-ফাইরুযাবাদী (রাহিমাহুল্লাহ) [৮১৭ হিজরী]
তার "তানওয়ীরুল মিকবাস মিন তাফসির ইবন আব্বাস" কিতাবের ১ম খন্ড ৪৭৬ নম্বর পৃষ্ঠায়,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
"তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং অনুরূপ যমীন সৃষ্টি করেছেন; (সূরা ত্বলাক্ব ১২)" এর{وَمِنَ الأَرْض مِثْلَهُنَّ}
"এবং পৃথিবী থেকেও অনুরূপ।"
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন:
سبعا وَلكنهَا منبسطة
"এগুলো সাতটি স্তর, তবে তা সমতলভাবে বিস্তৃত।"
تنوير المقباس من تفسير ابن عباس (ص: 476)
[১৫] ইমাম ইবন হাজার আল-আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) [৭৭৩–৮৫২ হিজরী]
তিনি তাঁর বিখ্যাত কিতাব ফাতহুল বারী-এর ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২৯৪ নম্বর পৃষ্ঠায়, “বাদ'উল খালক” (সৃষ্টির সূচনা) অধ্যায়ে, আল্লাহর বাণী {دَحَاهَا} – এর ব্যাখ্যায় বলেন:
قوله: {طحاها} دحاها) هو تفسير مجاهد أخرجه عبد بن حميد وغيره من طريقه، والمعنى بسطها يمينا وشمالا من كل جانب، وأخرج ابن أبي حاتم أيضا من طريق ابن عباس، والسدي وغيرهما: دحاها أي بسطها.
❝মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “দাহাহা” শব্দের অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। এই তাফসীর আব্দ ইবনে হুমাইদ প্রমুখ হাদীস বিশারদগণ মুজাহিদের সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
এর অর্থ হলো: আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীকে ডান-বামসহ সকল দিকে সমানভাবে বিস্তৃত করেছেন।
ইবন আবু হাতিম (রাহিমাহুল্লাহ)–ও ইবন আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু), আস-সুদ্দী (রাহিমাহুল্লাহ) ও অন্যান্যদের সূত্রে বর্ণনা করেছেন: “দাহাহা” অর্থ– আল্লাহ তায়ালা একে বিস্তৃত করেছেন।❞
তিনি আল্লাহ তায়ালার এই বাণীর ব্যাখ্যায় বলেন:
{وَالسَّقْفِ الْمَرْفُوعِ} [الطور: 5]
“এবং উঁচু করা ছাদ।” — সূরা আত-তূর, আয়াত ৫
وهو يقتضي الرد على من قال: إن السماء كرية لأن السقف في اللغة العربية لا يكون كريا.
❝এটি তাদের মতের খণ্ডন করে যারা বলে যে আকাশ গোলাকার। কারণ, আরবি ভাষায় 'ছাদ' এমন কিছু নয় যা বাঁকা হয়।❞
[المصدر : فتح الباري لابن حجر - ج ٦ - ص ٢٩٤]
তিনি তাঁর বিখ্যাত ভূমিকা গ্রন্থ হাদীউস সারী–তে (পৃষ্ঠা ১১৬) আল্লাহ তায়ালার বাণী {دَحَاهَا} এর ব্যাখ্যায় বলেন:
قوله: {دحاها} أي بسطها، ودحى السيل أي بسط فيه ما ساقه من تراب.
❝‘দাহাহা’ শব্দের অর্থ হলো: আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। আর ‘দাহা’ শব্দটি বন্যা/প্রবাহিত পানির বেলায়ও ব্যবহৃত হয়—যেমন, প্রবাহিত পানি তার সাথে বয়ে আনা মাটি-বালি ছড়িয়ে দেয় (অর্থাৎ সমতল করে)।❞
[المصدر : «هدي الساري» - المقدمة - ص ١١٦]
[১৬] ইমাম জালালুদ্দিন আল-মাহাল্লি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু: ৮৬৪ হিজরী]
ইমাম জালালুদ্দিন আল-মাহাল্লি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
وَقَوْله سُطِحَتْ ظَاهِر فِي أَنَّ الْأَرْض سَطْح وَعَلَيْهِ عُلَمَاء الشَّرْع لَا كُرَة كَمَا قَالَهُ أَهْل الْهَيْئَة وَإِنْ لَمْ يَنْقُض رُكْنًا مِنْ أركان الشرع
আল্লাহ তায়ালার এই বাণী
{وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ}
"এবং পৃথিবীর প্রতি, কিভাবে তা সমতল করা হয়েছে' [৮৮:২০])
-এর ব্যাখ্যায় বলেন:
"আল্লাহ তায়ালার কথা (سُطِحَتْ) সমতল করা হয়েছে;
এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে পৃথিবী সমতল, গোলক নয়- যেমনটি জ্যোতির্বিদরা বলে থাকে। যদিও এটি শরিয়তের কোনো আরকানকে বাতিল করে না।*
📘| تفسير الجلالين (ص: 805)
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/12876/6678
[১৭] ইমাম আবদুর রহমান আস-সা'আলিবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৮৭৫ হিজরী]
তিনি তাঁর তাফসীর গ্রন্থ তাফসীর আছ-সাআলিবী-র ৫ম খণ্ডের ৫৮৩ নম্বর পৃষ্ঠায়, সূরা আল-গাশিয়াহ-এর ২০ নম্বর আয়াত:
{وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ}
– এর ব্যাখ্যায় বলেন:
وظاهر الآية أن الأرض سطح لا كرة، وهو الذي عليه أهل العلم.
❝আয়াতের স্পষ্ট অর্থ হলো, পৃথিবী সমতল, গোলক নয়। আর এটাই আহলুল ইলমদের অভিমত।❞
[المصدر : تفسير الثعالبي - ج ٥ - ص ٥٨٣]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/23618/2610
তিনি একই তাফসীর গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ৪৯০ নম্বর পৃষ্ঠায়, সূরা নূহ-এর ১৯ নম্বর আয়াত:
{وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ بِسَاطًا}
– এর ব্যাখ্যায় বলেন:
وظاهر الآية: أن الأرض بسيطة غير كُرِيَةً.
❝আয়াতের বাহ্যিক অর্থ হলো, পৃথিবী সমতল, গোলক নয়।❞
এরপর তিনি বলেন:
❝পৃথিবীকে সমতল মনে করা—এটাই আল্লাহ তায়ালার কিতাবের স্পষ্ট বক্তব্য। আর এতে কোনো ধরনের বিভ্রান্তির আশঙ্কা নেই।❞
[المصدر : تفسير الثعالبي - ج ٥ - ص ٤٩٠]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/23618/2517
[১৮] ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রাহিমাহুল্লাহ) [৮৪৯-৯১১ হিজরী]
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রাহিমাহুল্লাহ) লিখেছেনঃ
قوله تعالى: {وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا}
قال الكرماني فيه دليل على أن الأرض مبسوطة وليست على شكل الكرة.
মহান আল্লাহ বলেনঃ
“ আর পৃথিবী, আমি সেটাকে বিছিয়ে দিয়েছি” (১৫:১৯}
ইমাম বুরহান উদ্দিন আল-কিরমানি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এটি প্রমাণ করে যে পৃথিবী সমতল এবং গোলক আকৃতির নয় ।
📘| كتاب الإكليل في استنباط التنزيل- [244]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/1385/234
[১৯] ইমাম মাজীরুদ্দীন ইবনে মুহাম্মাদ আল-মাকদিসী(রাহিমাহুল্লাহ) [৯২৭ হিজরী]
তার তাফসীরের ৩য় খন্ড ৫৪৬ নং পৃষ্ঠায়,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
{وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا}
এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
بَسَطْناها على وجهِ الماءِ، يقال: إنها مسيرةُ خمسِ مئةِ سنةٍ في مثِلها دُحِيَتْ من تحتِ الكعبةِ.
""আমরা পৃথিবীকে পানির উপর বিছিয়ে দিয়েছি। বলা হয় যে, এটি কাবার নিচ থেকে পাঁচশ বছরের পথ পরিমাণ বিস্তৃত হয়েছে এবং অনুরূপ আরও পাঁচশ বছরের পথব্যাপী প্রসারিত হয়েছে।""
«فتح الرحمن في تفسير القرآن» (3/ 546)
[২০] ইমাম আল খাতীব আশ শিরবিনী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৯৭৭ হিজরী]
তিনি তাঁর আস-সিরাজ আল-মুনীর কিতাবের ২য় খণ্ডের ১৪৫ নম্বর পৃষ্ঠায়, আল্লাহ তায়ালার এই বাণী:
{وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ}
– এর ব্যাখ্যায় বলেন:
أي: بسطها طولاً وعرضاً لتثبت عليها الأقدام ويتقلب عليها الحيوان ولو شاء لجعلها كالجدار والأزج لا يستطاع القرار عليها، هذا إذا قلنا أنّ الأرض مسطحة لا كرة، وعند أصحاب الهيئة أنها كرة، فكيف يقولون بذلك؟ ومدّ الأرض ينافي كونها كرة، كما ثبت بالدليل؟ أجيب: بأنّ الأرض جسم عظيم، والكرة إذا كانت في غاية الكبر كان كل قطعة منها تشاهد كالسطح، كما أنّ الله تعالى جعل الجبال أوتاداً، مع أنّ العالم من الناس يستقرّون عليها، فكذلك، ومع هذا فالله تعالى قد أخبر أنه مدّ الأرض ودحاها وبسطها، وكل ذلك يدل على التسطيح، والله تعالى أصدق قيلاً وأبين دليلاً من أصحاب الهيئة، هذا هو الدليل الأوّل من الدلائل الأرضية.
❝অর্থাৎ তিনি একে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বিস্তৃত করেছেন, যাতে মানুষের পা এতে স্থির থাকতে পারে এবং জীবজন্তু এতে চলাফেরা করতে পারে। তিনি চাইলে এটিকে দেয়ালের মতো খাড়া করে দিতে পারতেন, অথবা একে গোলক আকৃতির করলে তাতে স্থির থাকা সম্ভব হতো না। এটি তখনই বলা যায়, যখন আমরা বলি যে পৃথিবী সমতল, গোলক নয়। কিন্তু জ্যোতির্বিদদের মতে এটি গোলক আকৃতির।
তারা বলে, ‘পৃথিবী বিস্তৃত করা হয়েছে’—যা প্রমাণিত সত্য যে এটি গোলক হওয়ার বিপরীত। তবে তারা এর ব্যাখ্যায় বলে পৃথিবী একটি বিশাল দেহ। আর যদি কোনো গোলক অত্যন্ত বড় হয়, তবে তার প্রতিটি অংশ সমতল মনে হবে। যেমন, আল্লাহ পাহাড়গুলোকে খুঁটির মতো তৈরি করেছেন, অথচ কিছু মানুষ পাহাড়ের উপরও স্থির থাকতে পারে। এখানেও একই বিষয় প্রযোজ্য।
তবে এর পাশাপাশি আল্লাহ জানিয়েছেন যে, তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন, সমতল করেছেন এবং বিছিয়ে দিয়েছেন। এই সমস্ত শব্দই পৃথিবীকে সমতল করার বিষয়টি প্রমাণ করে। আর আল্লাহর কথা জ্যোতির্বিদদের কথার চেয়ে অধিক সত্য ও প্রমাণসক্ষম।❞
[المصدر : السراج المنير في الإعانة على معرفة بعض معاني كلام ربنا الحكيم الخبير - ج ٢ - ص ١٤٥]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/1466/799
উক্ত কিতাবের ২য় খণ্ডের ১৯৭ নম্বর পৃষ্ঠায়, আল্লাহ তায়ালার এই বাণীর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন:
{وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا}
“এবং আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি।”
قال ابن عباس: بسطناها على وجه الماء.
❝ইবন আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা একে পানির ওপর সমতলভাবে বিস্তৃত করেছি।”❞
[২১] ইমাম নাজমুদ্দিন আল-গাইতি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ৯৮২ হিজরী]
তাঁর 'আল-আজউবাতুল মুফিদাহ আনিল আস-ইলাতিল জাদি-দাহ' কিতাবের ৭৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বলেন:
والذي ذهب إليه عامة المفسرين من الكتاب العزيز أن السماء مسطوحة غير كرة وكذلك الأرض عندهم مسطوحة غير كرة،
"সাধারণভাবে অধিকাংশ মুফাসসিরগণ কুরআন থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, আকাশ সমতল এবং গোলক নয়। একইভাবে, তাদের মতে, পৃথিবীও সমতল এবং গোলক নয়।"
এরপর তিনি পরবর্তী পৃষ্ঠায় বলেন:
وهذه الآثار وما أشبهها لا تعين القول بأنها كرية مستديرة، بل ظاهرها أن السماء سقف كري كالخيمة، وهو قول قال به جماعة وإن رده من قال من أهل الهيئة بأنها كرية مستديرة كما رد القول بأنها مسطوحة؛ وقد علمت أن ظاهر القران يؤيده وقال به عامة المفسرين كما تقدم،
"এই সকল বর্ণনা ও অনুরূপ বর্ণনাগুলো থেকে পৃথিবীকে গোলক ও সম্পূর্ণ গোলাকার বলে প্রমাণ করা যায় না।' বরং এগুলোর বাহ্যিক অর্থ হলো - আসমান একটি গম্বুজাকার ছাদ, যেমনটি একটি তাবুর আকৃতি। এ মতটি একদল আলিম দিয়েছেন, যদিও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এটিকে খণ্ডন করে বলেছেন যে আকাশ গোলক আকৃতির। ঠিক যেভাবে তারা (জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা) পৃথিবীকে সমতল বলার মতকেও খণ্ডন করেছেন। 'আপনি নিশ্চয়ই জেনে গেছেন যে, কুরআনের বাহ্যিক অর্থ এটিই (সমতল পৃথিবীকে) সমর্থন করে। এবং অধিকাংশ মুফাসসিরও এ মত পোষণ করেছেন, যেমন পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।"
الأجوبة المفيدة عن الأسئلة العديدة [74-75]
[২২] ইমাম ইবনু 'আল্লান (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১০৫৭ হিজরী]
তিনি তাঁর দালীলুল ফালিহীন লিতুরুক রিয়াদুস সালিহীন কিতাবে আল্লাহ তায়ালার এই বাণীর ব্যাখ্যায় বলেন:
{إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ}
“নিঃসন্দেহে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির মাঝে নিদর্শন রয়েছে।”
إذ جعل الأولى: مرفوعة لا على عمد. والثانية: مدحوة مسطحة على ماء جمد.
❝তিনি প্রথমটিকে (আকাশকে) স্তম্ভ ছাড়া উঁচু করে রেখেছেন, আর দ্বিতীয়টিকে (পৃথিবীকে) বিছিয়ে, সমতল করে পানির উপর দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছেন।❞
[المصدر : دليل الفالحين لطرق رياض الصالحين - ج ٧ - ص ٢٤٣]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/140/1928
[৬] সমসাময়িক আলেমগণের বক্তব্য থেকে সমতল পৃথিবীর দলীলসমূহ
[১] ইমাম ইসমাঈল হাক্কী আল ইস্তানবুলী (রাহিমাহুল্লাহ) [১১২৭ হিজরী]
ইমাম ইসমাঈল হাক্কী ইস্তানবুলী (রাহিমাহুল্লাহ)
তার তাফসীরে "রুহুল বায়ান"-এর ৯ম খন্ড ১০৭ নং পৃষ্ঠায়,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
{وَالْأَرْضَ مَدَدْناها}
এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
اى بسطناها وفرشناها على وجه الماء مسيرة خمسمائة عام من تحت الكعبة وهذا دليل على ان الأرض مبسوطة وليست على شكل الكرة كما في كشف الاسرار
অর্থাৎ আমরা একে প্রশস্ত করেছি ও পানির ওপর বিছিয়ে দিয়েছি, [যার বিস্তৃতি] কাবা'র নিচ থেকে পাঁচশ বছরের পথের সমান। এটি প্রমাণ করে যে পৃথিবী সমতল (প্রসারিত), গোলাকার নয়— যেমনটি "কাশফুল আসরার" গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে।
«روح البيان» (9/ 107)
"রুহুল বায়ান"-এর ৯ম খন্ড ১৭১ নং পৃষ্ঠায়,
আল্লাহ তায়ালার এই বাণীঃ
{فَرَشْناها}
এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ
مهدناها وبسطناها من تحت الكعبة مسيرة خمسمائة عام ليستقروا عليها ويتقلبوا كما يتقلب أحدهم على فراشه ومهاده
"প্রশস্ত করেছি এবং কাবা'র নীচ থেকে ৫০০ বছরের পথব্যাপী বিস্তৃত করেছি, যাতে তারা তাতে স্থির থাকতে পারে এবং নিজেদের শয্যায় পাশ ফেরার মতো স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারে।"
«روح البيان» (9/171)
[২] ইমাম আল-কুনাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [১১৯৫ হিজরী]
তিনি তাফসির আল-বাইদাওয়ী-এর হাশিয়াতে (১০ম খণ্ড, ৪৫১ পৃষ্ঠা) বলেন:
قوله : (أي بسطها طولاً وعرضاً) إذ الأرض عبارة عنهما والكلام من قبيل من قتل قتيلاً فله سلبه إذ كونها أرضاً بعد المد والبسط أو من قبيل ضيق فم البئر استدل به بعضهم على تسطح الأرض وقال الإمام ثبت بالدليل أن الأرض كرة ولا ينافي ذلك قوله تعالى : وهو الذي مد الأرض [الرعد: [٣] وذلك أن جميع الأرض جسم عظيم والكرة إذا كانت في غاية الكبر كان كل قطعة منها يشاهد سطحاً انتهى. ولا يخفى أنه أراد بالدليل الدليل العقلي على أصول الفلاسفة التي غير تامة على قواعد أهل الملة والشريعة فلا يعدل عن ظاهر الآية بما قرر عند الفلاسفة والمتفلسفة .
❝তিনি বলেন, “তাঁর বক্তব্য (অর্থাৎ পৃথিবীকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বিস্তৃত করা) - কারণ 'পৃথিবী' শব্দটি মূলত এ দু'টি দিক (দৈর্ঘ্য-প্রস্থ) দ্বারাই সংজ্ঞায়িত। এই বক্তব্য ঐ রীতিতে বলা হয়েছে, যেমন বলা হয়: 'যে ব্যক্তি কোনো হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে, সে মৃতের ধনসম্পত্তি পাবে'। অর্থাৎ, পৃথিবীকে 'মাদ্দ' (প্রসারিত করা) ও 'বাসত' (সমতল করা)-এর পরই তা 'পৃথিবী' নামের উপযুক্ত হয়েছে। অথবা এটি সেই রীতিতে বলা হয়েছে, যেমন বলা হয়: 'কূপের মুখ সংকীর্ণ করা'।
কেউ কেউ এ আয়াতকে পৃথিবীর সমতলতার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে ইমাম আল-বাইদাওয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: 'প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যে পৃথিবী গোলাকার। আর এটা আল্লাহর বাণী "তিনিই পৃথিবীকে প্রসারিত করেছেন" (সূরা রা'দ: ৩)-এর সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ সমগ্র পৃথিবী একটি বিশাল দেহ, আর যখন কোনো গোলক অত্যন্ত বৃহৎ হয়, তখন তার প্রতিটি অংশ দর্শকের নিকট সমতল মনে হয়।'
এরপর আল-কুনাবী (রাহিমাহুল্লাহ) মন্তব্য করেন: ❝এটি স্পষ্ট যে, তিনি (আল-বাদাওয়ি) এখানে 'প্রমাণ' বলতে দার্শনিকদের বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তিকে বোঝাচ্ছেন, যা প্রকৃতপক্ষে শরীয়ত ও ধর্মীয় বিধানের ভিত্তির সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই কোনো আয়াতের স্পষ্ট অর্থকে দার্শনিকদের মতের ভিত্তিতে পরিবর্তন করা উচিত নয়।❞
[المصدر: حاشية القونوي على تفسير البيضاوي ومعه حاشية ابن التمجيد - ج ١٠ - ص ٤٥١]
[৩] মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব ইবনে আব্দুর রাযযাক আল-মারাকিশী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১২০৩ হিজরী]
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব ইবনে আব্দুর রাযযাক আল-মারাকিশী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর আল আযবুয যুলাল কিতাবের ৬০ নম্বর পৃষ্ঠায় বলেন:
على أن فكرة كون الأرض مسطحة وليست بكرة هي فكرة شائعة بين بعض طبقة أهل العلم،
❝পৃথিবী সমতল এবং গোলাকার নয়, এমন ধারণা কিছু আলেমের মধ্যে একটি প্রচলিত মত।❞
[المصدر : العزبوز جلال - ص 60]
الحاج محمد بن عبد الوهاب بن عبد الرازق المراكشي
তথ্যসূত্রঃ https://archive.org/details/3adbZolal01/3adb-zolal-01/page/60/mode/1up
[৪] ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আশ-শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১২৫০ হিজরী]
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী আশ-শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
«وَالْأَرْضَ مَدَدْناها أَيْ: بَسَطْنَاهَا وَفَرَشْنَاهَا كَمَا فِي قَوْلِهِ: وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذلِكَ دَحاها «النازعات: ٣٠» ، وفي قوله: وَالْأَرْضَ فَرَشْناها فَنِعْمَ الْماهِدُونَ «الذاريات: ٤٨» ، وَفِيهِ رَدٌّ عَلَى مَنْ زَعَمَ أَنَّهَا كَالْكُرَةِ.»
❝আর "وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا" (এবং পৃথিবীকে আমরা বিস্তৃত করেছি) অর্থাৎ আমরা এটাকে বিস্তৃত করেছি এবং বিছিয়ে দিয়েছি, যেমন আল্লাহর বাণীতে বলা হয়েছেঃ
"وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَاهَا"
'এবং পৃথিবীকে এরপর বিছিয়ে দিয়েছেন' [৭৯:৩০]
এবং তাঁর বাণীঃ
"وَ الۡاَرۡضَ فَرَشۡنٰهَا فَنِعۡمَ الۡمٰهِدُوۡنَ"
'আর আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কতইনা সুন্দর বিছানা প্রস্তুতকারী!' [৫১:৪৮]
এতে তাদের দাবির খণ্ডন রয়েছে, যারা বলে যে পৃথিবী গোলকের মতো।❞
📘| - [كتاب فتح القدير للشوكاني,3/151]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/23623/1381#p1
[৫] ইমাম আল-মাযহারী (রাহিমাহুল্লাহ) [১২২৫ হিজরী]
তিনি তাঁর তাফসিরুল মাযহারী কিতাবের ১০ম খণ্ড, ২৫২ নম্বর পৃষ্ঠায়, আল্লাহ তায়ালার এই বাণী
{وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ} [الغاشية: 20]
– "এবং পৃথিবীর প্রতি তাকিয়ে দেখ, কিভাবে তা সমতল করা হয়েছে" – এর ব্যাখ্যায় বলেন:
سطحا مستويا بساطا واحدا فكذا الزرابي
অর্থ: “এটি সমানভাবে সমতল করা হয়েছে, একটানা বিছানার মতো, যেমন কার্পেট সমানভাবে বিছানো হয়।”
[المصدر: التفسير المظهري - ج 10 - ص 252]
[৬] ইমাম আল আলূসী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১২৭০ হিজরী]
তিনি তাঁর তাফসীর গ্রন্থ রূহুল মা‘আনী-তে আল্লাহ তায়ালার এই বাণীর ব্যাখ্যায় বলেন:
{وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا}
“এবং আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি।”
وعن ابن عباس أنه قال: بسطناها على وجه الماء.
❝ইবন আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা একে পানির ওপর সমতলভাবে বিস্তৃত করেছি।”❞
[المصدر : تفسير الألوسي - روح المعاني - ج ٧ - ص ٨٦]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/35563/2780
[৭] শায়খ নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান ভূপালি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১৩০৭ হিজরী]
শায়খ নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান ভূপালি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
«(مددناها) أي بسطناها وفرشناها على وجه الماء كما في قوله والأرض بعد ذلك دحاها وفي قوله والأرض فرشناها فنعم الماهدون وفيه رد على من زعم أنها كالكرة»
[আমরা তা বিস্তৃত করেছি] অর্থাৎ, আমরা তা বিস্তৃত করেছি এবং পানির ওপর বিছিয়ে দিয়েছি।
যেমন আল্লাহর বাণীতে বলা হয়েছেঃ
"وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَاهَا"
'এবং পৃথিবীকে এরপর বিছিয়ে দিয়েছেন' [৭৯:৩০]
এবং তাঁর বাণীঃ
"وَ الۡاَرۡضَ فَرَشۡنٰهَا فَنِعۡمَ الۡمٰهِدُوۡنَ"
'আর আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কতইনা সুন্দর বিছানা প্রস্তুতকারী!' [৫১:৪৮]
এতে তাদের দাবির খণ্ডন রয়েছে, যারা বলে যে পৃথিবী গোলকের মতো।"
* فتحُ البيان في مقاصد القرآن [7/157]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/37458/4266
তিনি তাঁর "ফাতহুল বায়ান ফি মাকাসিদিল কুরআন" কিতাবের ৭ম খণ্ড, ১১-১২ নম্বর পৃষ্ঠায় বলেন:
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وهو الذي مد الأرض
'তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন,
এর ব্যাখ্যায় বলেন,(وهو الذي مد الأرض) على وجه الماء، قال الفراء: بسطها طولاً وعرضاً لتثبت عليها الأقدام ويتقلب عليها الحيوان، وقال الأصم: أن المدّ هو البسط إلى ما لا يدرك منتهاه زاد الكرخي: فقوله مد الأرض يشعر بأنه تعالى جعل الأرض حجماً عظيماً لا يقع البصر على منتهاه انتهى. قيل وهذا المد الظاهر للبصر لا ينافي كرويتها في نفسها لتباعد أطرافها، وبه قال أهل الهيئة ، والله أخبر أنه مد الأرض وأنه دحاها وبسطهما وأنه جعلها فراشاً وكل ذلك يدل على كونها مسطحة كالأكف، وهو أصدق قيلاً وأبين دليلاً من أصحاب الهيئة.
(আর তিনিই যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন) পানির ওপর। ফাররা (রহ.) বলেছেন: তিনি পৃথিবীকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বিস্তৃত করেছেন, যাতে পা স্থিরভাবে দাঁড়াতে পারে এবং প্রাণীরা এর ওপর চলাফেরা করতে পারে। আসাম (রহ.) বলেছেন: "মাদ্দ" (বিস্তৃত করা) অর্থ হলো এমনভাবে প্রসারিত করা যার শেষ সীমা অনুধাবন করা যায় না। কারখী (রহ.) যোগ করেছেন: "আল্লাহর বাণী 'মাদ্দাল আরদ' (পৃথিবীকে বিস্তৃত করা) ইঙ্গিত দেয় যে তিনি পৃথিবীকে এমন বিশাল আকার দান করেছেন, যার শেষপ্রান্ত দৃষ্টিগোচর হয় না।"
কেউ কেউ বলেন, দৃষ্টির জন্য প্রকাশিত এই বিস্তৃতি পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গোলাকার আকৃতির সাথে সাংঘর্ষিক নয়, কারণ এর প্রান্তসমূহ অত্যন্ত দূরে অবস্থিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই মত পোষণ করেন ।
তবে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন, প্রসারিত করেছেন, বিছিয়ে দিয়েছেন এবং একে কার্পেটের মতো সমতল করেছেন। এসব বর্ণনা প্রমাণ করে যে পৃথিবী হাতের তালুর মতো সমতল। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের যুক্তির চেয়ে অধিক সত্য ও স্পষ্ট দলিলভিত্তিক বক্তব্য।
فتح البيان في مقاصد القرآن (7/ 11)
[৮] ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ আত-তুফাইশ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১৩৩২ হিজরী]
তিনি তাঁর কিতাব হিমইয়ানুয জাদ ইলা দারিল মাআদ-এর ৮ম খণ্ড, ২৯০ নম্বর পৃষ্ঠায়, আল্লাহ তায়ালার এই বাণীর ব্যাখ্যায় বলেন:
{وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ}
“এবং তিনিই পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন।”
(وهو الذي مد) بسط (الأرض) على الماء من تحت البيت الحرام طولا وعرضا لينتفع عليها، سواء قلنا: إنها سطحية وهو الصحيح الظاهر
❝অর্থাৎ, পৃথিবীকে বাইতুল হারামের নিচ থেকে পানির উপর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বিস্তৃত করা হয়েছে— যাতে মানুষের জন্য এটি উপকারী হয়। পৃথিবী সমতল — এটাই প্রকৃত ও বাহ্যিক অর্থ।❞
[المصدر: هِمْيَانُ الزَّادِ إِلَى دَارِ الْمَعَاد - ج ٨ - ص ٢٩٠]
[৯] শায়খ মুহাম্মাদ আব্দুর-রহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১৩৫৩ হিজরী]
শায়খ মুহাম্মাদ আব্দুর-রহমান মুবারকপুরী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন,
قُلْتُ إِنْ أَرَادَ بِقَوْلِهِ إِنَّ الْأَرْضَ كُرَوِيَّةٌ اتِّفَاقًا أَنَّ جَمِيعَ أَئِمَّةِ الدِّينِ مِنَ السَّلَفِ وَالْخَلَفِ مُتَّفِقُونَ عَلَى كُرَوِيَّةِ الْأَرْضِ وَقَائِلُونَ بِهَا فَهَذَا بَاطِلٌ بِلَا مِرْيَةٍ وَإِنْ أَرَادَ بِهِ اتِّفَاقَ أَهْلِ الْفَلْسَفَةِ وَأَهْلِ الْهَيْئَةِ فَهَذَا مِمَّا لَا يُلْتَفَتُ إِلَيْهِ ثُمَّ مَا فَرَّعَ عَلَى كُرَوِيَّةِ الْأَرْضِ فَفِيهِ أَنْظَارٌ وَخَدَشَاتٌ فَتَفَكَّرْ قَوْلُهُ
আমি বলি, ❝যদি তার (আরফুশ শাযীর লেখকের) এই বক্তব্যে উদ্দেশ্য হয় যে, পৃথিবী গোলাকার—এ বিষয়ে সকল পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ধর্মীয় ইমামগণ একমত এবং তারা সকলেই এ মত পোষণ করেন, তবে এটা নিঃসন্দেহে বাতিল। আর যদি তার উদ্দেশ্য হয় দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদদের ঐক্যমত, তবে এটি এমন বিষয় যাতে কোনো গুরুত্ব দেওয়া যায় না। অতঃপর পৃথিবীর গোলাকার হওয়ার উপর ভিত্তি করে তিনি যা প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তাতে বিভিন্ন মত ও সমালোচনা রয়েছে। সুতরাং চিন্তা করুন।❞
📚 [تحفة الأحوذي (1/ 424)]
📚 [তুহফাতুল আহওয়াযী (১/৪২৪)]
[১০] শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী আল ওয়াদিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [ মৃত্যু ১৪২২ হিজরী]
ইয়েমেনের মুহাদ্দিস শাইখ মুক্ববিল বিন হাদী-আল ওয়াদিঈ রহিমাহুল্লাহকে পৃথিবী কি গোলাকার নাকি সমতল? এবং এই আয়াত সম্পর্কে “এবং পৃথিবীর দিকে, কিভাবে এটিকে সমতল করা হয়েছে?” [৮৮ঃ২০] প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, “আলেমগণ দ্বিমত পোষণ করেন। জমহুর [সংখ্যাগরিষ্ঠ] আলেমগণ বলেছেন এটা সমতল [ফ্ল্যাট], এবং আবু মুহাম্মাদ ইবনু হাযম, এবং শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ, এবং হাফেয ইবনু কাসীর এবং তাদের একটি গ্রুপ বলেছেনঃ এটি গোলাকার, এবং কুরআন ও সুন্নাহ থেকে এমন কোন স্পষ্ট দলিল নেই যে এটি গোলাকার বা গোলাকার নয়।”
هل الأرض كروية أم مسطحة ؟ وما معنى قوله تعالى : " وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ " [ الغاشية : 20 ] ؟
اختلف العلماء فجمهور أهل العلم يقولون : إنها مسطحة ، وأبو محمد بن حزم وشيخ الإسلام ابن تيمية والحافظ ابن كثير وجمعٌ معهم يقولون : إنها كروية ، وليس هناك دليل من القرآن والسنة صريح بأنها كروية ولا أنها ليست بكروية ، أما مسطحة فممكن أن في حقنا مسطحة ولا يمنع أن أطرافها يلتف ويرتفع إلى فوق ، فما هناك دليل صريح يدل على ذلك فيٌرجع إلى الواقع ، فالذي يظهر أن أبا محمد ابن حزم وشيخ الإسلام ابن تيمية ومن
جرى مجراهما أنهم واسعوا الأفق وأنهم عرفوا أن أطراف الدنيا مكورة والله المستعان .
هذا وليس في الآية ما يمنع ذلك أعني قوله تعالى : " وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ " [ الغاشية : 20 ] .
সরাসরি শায়খের কন্ঠে শুনুনঃ
Youtube Video Link[১১] শাইখ আবু বকর আল-জাজাইরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১৪৩৯ হিজরী]
তিনি তাঁর তাফসীরগ্রন্থ আইসারুত তাফাসির লি কালামিল আলিইয়্যিল কাবীর–এ সূরা আন-নাযিয়াত এর (২৮-৩০) আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় বলেন:
“فَسَوَّاهَا” — অর্থাৎ, তিনি (আল্লাহ) আকাশকে এক সমতল করে দিয়েছেন, যাতে কোনো উঁচু-নিচু নেই।
“وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا” — অর্থাৎ, তিনি রাতকে অন্ধকারময় করেছেন, একে ঘন অন্ধকারে পরিণত করেছেন।
“وَأَخْرَجَ ضُحَاهَا” — অর্থাৎ, তিনি দিনের আলো (সকাল) বের করেছেন।
“وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَاهَا” — অর্থাৎ, আকাশ সৃষ্টির পর তিনি পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছেন; অর্থাৎ একে প্রশস্ত করেছেন এবং এর পানি ও চারণভূমি বের করেছেন।
“وَالْجِبَالَ أَرْسَاهَا” — অর্থাৎ, তিনি পাহাড়গুলোকে পৃথিবীর উপর দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছেন, যাতে এটি স্থির থাকে এবং দুলতে না পারে।
“مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ” — অর্থাৎ, তিনি পৃথিবী থেকে এর পানি ও চারণভূমি বের করেছেন এবং পাহাড়গুলোকে স্থাপন করেছেন, তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের (গবাদি পশুদের) উপকারের জন্য।
[المصدر : أيسر التفاسير للجزائري - ج ٥ - ص ٥١٢]
তথ্যসূত্রঃ https://shamela.ws/book/20808/4893
[১২] শাইখ মুহাম্মাদ আল-আমীন আল-হারারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১৪৪১ হিজরী]
তিনি তাঁর হাদাইকুর রূহি ওয়ার রাইহান ফি রাওয়াবি উলূমিল ক্বুরআন কিতাবের ১৪তম খণ্ডে, আল্লাহ তায়ালার এই বাণীর ব্যাখ্যায় বলেন:
{وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ}
“এবং তিনিই পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন।”
أي: بسطها طولًا وعرضًا، ووسعها؛ أي: جعلها متسعة ممتدة في الطول والعرض؛ لتثبت عليها الأقدام، ويتقلب عليها الحيوان، وينتفع الناس بخيراتها زرعها وضرعها، وبما في باطنها من معادن جامدة وسائلة، ويسيرون في أكنافها يبتغون رزق ربهم منها.
❝অর্থাৎ, তিনি পৃথিবীকে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে প্রশস্ত ও বিস্তৃত করেছেন, যাতে মানুষ এর উপর দাঁড়াতে পারে, প্রাণীরা এতে চলাফেরা করতে পারে এবং মানুষ এর ফসল, দুধ ও ভূমির অভ্যন্তরে থাকা কঠিন ও তরল খনিজ সম্পদ থেকে উপকৃত হতে পারে। আর তারা এর বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করে তাদের রবের দেওয়া রিজিক অন্বেষণ করতে পারে।❞
والمعنى: أنشأها ممدودة بسيطة، لا أنها كانت مجموعة في مكان فبسطها، وهذا يدل على كونها مسطحة كالأكف.
❝এর অর্থ হলো, তিনি একে প্রসারিত ও সমতলভাবে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ, এটি কোনো এক স্থানে গুটিয়ে থাকার পর বিছানো হয়নি, বরং প্রসারিত ও সমতলরূপেই সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি পৃথিবীকে হাতের তালুর মতো সমতল হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে।❞
তিনি পরবর্তী পৃষ্ঠায় বলেন:
❝এরপরেও, আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন যে, “তিনি বিস্তৃত করেছেন”, “তাকে সমতল করেছেন” এবং “বিছিয়ে দিয়েছেন”। এই সমস্ত শব্দই প্রমাণ করে যে, পৃথিবী সমতল। আর আল্লাহ তায়ালার বক্তব্য জ্যোতির্বিদদের কথার চেয়ে অধিক সত্য ও স্পষ্ট প্রমাণসম্মত।❞
[المصدر : تفسير حدائق الروح والريحان في روابي علوم القرآن - ج ١٤ - ص ١٦٧]
[১৩] শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১৪৪৭ হিজরী]
শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
وإذا رجع القاريء إلى كتب فحول المفسرين لا يجد فيها أن الأرض كروية فهل يحط هذا من منازلهم ويجعلهم بدواً وبدائيين ؟ كلا ثم كلا، بل لا يساوي علماء الفلك من المسلمين كبير شيء إلى جانبهم ، فضلا عن علمائه من غير المسلمين .
❝যদি পাঠক প্রখ্যাত মুফাসসিরদের কিতাবগুলো খুঁজে দেখেন, সেখানে তিনি পৃথিবী গোলাকার—এমন কথা পাবেন না। তাহলে কি এটি তাদের মর্যাদাকে খাটো করে এবং তাদেরকে পিছিয়ে পড়া ও আদিম হিসেবে গণ্য করে? কখনই না, কখনই না। বরং মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাদের (মুফাসসিরগণের) তুলনায় তুচ্ছ, আর অমুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথা তো বলাই বাহুল্য। ❞
📚 كشف موقف الغزالي من السنة وأهلها ونقد بعض آرائه [63]
[১৪] শায়খ মুস্তাফা আল বুগা (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম ~ ১৩৫৭ হিজরী]
তিনি সহীহ বুখারীর টীকায় বলেন ৪র্থ খন্ডের ১০৬ নং পৃষ্ঠায় বলেন,
(دحاها) بسطها بحيث تكون صالحة للسكنى والعيش عليها.
"{দাহা'হা} - অর্থাৎ তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীকে এমনভাবে সমতলে বিছিয়েছেন যাতে তা বসবাস ও জীবনযাপনের জন্য উপযোগী হয়।"
صحيح البخاري (4/ 106)
তিনি সহীহ বুখারীর টীকায় বলেন ৬ষ্ঠ খন্ডের ১২৮ নং পৃষ্ঠায় বলেন,
(دحاها) بسطها ومدها وجعلها صالحة للسكنى والعيش عليها والتقلب في أقطارها.
"{দাহা'হা} - অর্থাৎ "তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীকে সমতলে বিছিয়েছেন, প্রসারিত করেছেন এবং একে বসবাস, জীবনযাপন ও এর বিভিন্ন প্রান্তে চলাচলের জন্য উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন।"
صحيح البخاري (6/ 128)